পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
মাধবীর বাপেরবাড়ি সাঁইথিয়ার বোলসণ্ডা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই ঠাকুরদাদা বাবাকে প্রতিমা তৈরি করতে দেখেছেন। কখনও কালী, কখনও দুর্গা, আবার কখনও লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রতিমা গড়েছেন বাবা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ইচ্ছে থাকলেও সেই সময় প্রতিমা গড়ার কাজ তাঁর শেখার সুযোগ হয়নি। কারণ, বাবা চাইতেন, মেয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করুক। যদিও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর আর্থিক অনটনের কারণে কলেজে যাওয়া হয়নি মাধবীর। এরই মধ্যে তাঁর বিয়ে হয় রামপুরহাটের শিবতলা পাড়ার বাসিন্দা আলো দাসের সঙ্গে। আলোও মৃৎশিল্পী।
মাধবী বলেন, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই সংসারের কাজের ফাঁকে স্বামীর কাজ মন দিয়ে দেখতে দেখতে আমিও প্রতিমা গড়ার কাজ শিখে ফেলি। এর ফলে অভাবের সংসারে যেমন বাড়তি আয় হয়, তেমনই আমার নিজের হাতে প্রতিমা গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে আমিও প্রতিমা তৈরি করছি।
আলো বলেন, নিজের একার পক্ষে এত প্রতিমা গড়া সম্ভব নয়। তাছাড়া যে হারে রং, সাজ ও চুলের দাম বেড়েছে তাতে কর্মী রেখে লাভের মুখ দেখা খুবই কঠিন। স্ত্রী সাহায্য করায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। এবার আমরা দু’জনে মিলে দেড় মাসের পরিশ্রমে ৮০টি সরস্বতী মূর্তি গড়েছি। প্রতিমার দাম ৭০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবছর রামপুরহাট গার্লস স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ সহ বিভিন্ন স্কুল থেকে তাঁরা প্রতিমা তৈরির বায়না পেয়েছেন। মাধবী বলেন, আমাদের তৈরি সরস্বতী প্রতিমার পুজো হবে বিভিন্ন স্কুল কলেজের মণ্ডপে। এটা ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে।
বর্তমানে তাঁরা তাঁদের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া পল্লব দাসকে প্রতিমা গড়ার তালিম দিচ্ছেন। পল্লবের খুব পছন্দের বিষয় হল হাঁস। তাই রং, তুলি দিয়ে সমস্ত বাগদেবীর বাহনের চোখ ফুটিয়ে তুলছে সে। লাজুক স্বভাবের পল্লব বলে, স্কুলে কাউকে কিছু বলিনি। আর একটু বড় হয়ে সবাইকে জানাব। এদিকে, এবার স্বামীর পাশাপাশি সরস্বতীর চক্ষুদান করেছেন মাধবীও। আলো বলেন, ছেলের প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখে আমরাও অবাক হয়ে যাচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে ও প্রতিমা তৈরিকেই পেশা হিসেবে নেবে কি না জানি না। তবে একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি, যে ওর কখনও কাজের অভাব হবে না।
রামপুরহাট গার্লস স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা রামপুরহাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুকান্ত সরকার বলেন, ওদের তৈরি প্রতিমা সকলকে মুগ্ধ করবে। দু’জনেরই অপূর্ব হাতের কাজ। আর নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি সংসারের অর্থাভাব ঘোচাতে মাধবীদেবীর লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।