বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
আগামী ১৯জানুয়ারি বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে কলকাতায় ব্রিগেডে সভা করবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে এদিন সাগরদিঘির হাইস্কুল ময়দানে সভা করেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু। সভায় তিনি বলেন, বর্তমানে জেলায় সিপিএমের কিছু নেই। ওদের অবস্থা, গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল। ইতিমধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে প্রাক্তন সংসদ সদস্য মইনুল হাসান, কৃষকনেতা তথা নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল সিপিএম ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আগামী ১০দিনের মধ্যে সিপিএমের বড় উইকেট ফেলব। আর কয়েকজনকে ছেড়ে রেখেছি, যখন-তখন তাঁদের দলে নিতে পারি। শুভেন্দুর এমন হুঙ্কারের পরই সভাস্থলে গুঞ্জন শুরু হয়। অনেকে বলেন, কংগ্রেসের অবশিষ্ট বিধায়কদের এবং সিপিএমের জঙ্গিপুরের কোনও নেতা বা বিধায়ককে দলে নিতে চলেছেন শুভেন্দু।
এদিন সভায় স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের সমালোচনা করে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক বলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইকে সকলেই কুর্নিশ করছেন। মমতাদির পাশে রয়েছেন কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধী। রাহুল গান্ধী দিদিকে পাশে বসতে বলছেন। কিন্তু, এই জেলার কংগ্রেস নেতারা উল্টোপথে চলছেন। স্টেশনে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে জড়িয়ে ধরে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা মাইনুল হক। আরএক বড় কংগ্রেস নেতা অধীরবাবু উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে লাঞ্চ করছেন। এই জেলায় এবার লোকসভা ভোটে বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াই হবে। এখানকার বেইমান কংগ্রেসিরা ভোট কাটার চেষ্টা করবে। তা আপনাদের রুখে দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া যাবে না। এরবাইরে এদিনের সভায় তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার।
সাগরদিঘির সভার আগে বহরমপুরে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত ব্রিগেডের প্রস্তুতিসভায় যোগ দেন শুভেন্দু। এদিন দুপুরে তিনি কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে বহরমপুরে আসেন। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অশোক দাস, দলের টাউন সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডলকে নিয়ে দলের মহকুমা সভাপতি অরিৎ মজুমদারের বাড়িতে যান তিনি। একদিন আগে অরিতের দিদি তথা সংসদ সদস্য অধীর চৌধুরীর স্ত্রী অর্পিতা চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে। অর্পিতাদেবীর বাবা-মা ও অরিতের কাছে সমবেদনা জানান শুভেন্দু। এরপর তিনি শহরের টেক্সটাইল মোড়ে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় যোগ দেন। তিনি বলেন, মা, দিদি, বোনদের সম্মান এই দল ছাড়া অন্য কোনও দলে নেই। আমরা মহিলাদের মঞ্চের নীচে বা সামনে বসতে দিই না। নেতাদের পাশে মহিলাদের বসাই। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০শতাংশ আসন সংরক্ষণ আমাদের সরকারই করেছে। তবে, এই শহরের বড় কংগ্রেস নেতার চরিত্র আপনারা জানেন। ওই নেতাকে এবার লোকসভা ভোটে বহরমপুর থেকে সরিয়ে জোড়াফুলকে জেতাতে হবে। সভায় মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মহিলা সংগঠনের জেলা সভানেত্রী শাহানাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।
জেলায় তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিগুলির মধ্যে সাগরদিঘি অন্যতম। ২০১১সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার অন্যান্য প্রান্তে তৃণমূল পরাজিত হলেও শুধুমাত্র সাগরদিঘিতে ঘাসফুল ফোটে। ২০১৬সালের বিধানসভা নির্বাচনেও কেন্দ্রটি ধরে রেখেছে তৃণমূল। এবার এখানে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ব্যাপক ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কাজেই, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সাগরদিঘিতে শুভেন্দুর এদিনের সভা কার্যত বিজয় উৎসবের চেহারা নেয়। রনপা নিয়ে মিছিল করে, ব্যান্ড বাজিয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সভায় ভিড় করেন। এমনকী, মাথায় ফুলের টব নিয়ে মাদলের তালে নৃত্য পরিবেশন করেন আদিবাসী মহিলারা।
সভায় শুভেন্দু ছাড়া স্থানীয় বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা, দলের চেয়ারম্যান মহম্মদ সোহারাব, বিধায়ক শাওনী সিংহরায়, আখরুজ্জামান, মহম্মদ আলি, সাগির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শুভেন্দু বলেন, সাগরদিঘিকে আমাদের বাড়ি মনে করি। সর্বদা আপনারা আমাদের পাশে আছেন। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এখান থেকে ৫০হাজার ভোটের লিড চাই। এদিন সাগরদিঘি ও বহরমপুর দু’টি সভাতেই ভিড় উপচে পড়ে। এই দু’টি সভা নিয়ে দেড় মাসে জেলায় প্রায় একডজন ব্রিগেড চলো কর্মসূচি হিসেবে সভা করলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, প্রতিটি সভাতেই ব্যাপক ভিড় হয়েছে। এবার এখানকার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রই আমরা দখল করব। এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্রিগেড সভার পর জেলায় ফিরে বুথে বুথে কমিটি গড়ে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।