পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
দিনহাটা-১ ব্লকের শিবা যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসে হাওড়া হয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিলেন। অভিশপ্ত রাতে তিনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হাওড়ামুখী ট্রেনটিতে ছিলেন। ২ জুন রাতে ছেলের ফেরার ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই পরিবারটি চরম উৎকণ্ঠায় থাকে। শিবার বাবা শিবকান্ত রায় খবর পেয়ে বাড়িতে না এসে নিজের কর্মস্থল অরুণাচলপ্রদেশ থেকে সরাসরি চলে যান ওড়িশার বালেশ্বরে। বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজে ছেলেকে না পেয়ে নিহত যাত্রীদের ফটো দেখে ‘১৪ নম্বর’ দেহটি শিবির দেহ বলে শনাক্ত করেন। সেই ফটো শিবকান্তবাবু স্ত্রী লক্ষ্মী রায়কে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। শিবার ফটো দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন লক্ষ্মী। ছেলের নিথর দেহ নিয়ে দিনহাটায় ফিরবেন বলে মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন শিবকান্তবাবু। এরপরেই ঘটে বিপত্তি।
ওড়িশা থেকে বৃহস্পতিবার শিবকান্ত রায় বলেন, অনেক খুঁজে ছেলেকে পাই। তবে জীবিত নয়, মৃতদেহের লাশের পাহাড়ে। ‘১৪ নম্বর’ দেহটি ছেলের বলে আমি এবং আমার পরিবার শনাক্ত করি। পরবর্তীতে বিহারের একটি পরিবার এসে ১৪ নম্বর দেহটি তাঁদের বলে দাবি করে। পরে দেখি একটি আধার কার্ড দেখিয়ে দেহটি নিয়ে চলে গেল। ছেলের মৃত্যুশোকে একদিকে ভেঙে পড়েছি। অন্যদিকে নিজের সন্তানকে চোখের সামনে অন্য একটি পরিবার নিয়ে গেল। আমি রেলের আধিকারিকদের সামনে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু, কিছুই হয়নি। আমার শিবার বয়স ২৬। আর বিহারের যে পরিবার দেহটি তাদের বলে দাবি করে নিয়ে যায়, সেই ব্যক্তির বয়স ছিল ৪৬। এখন কী করব ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না। ওই পরিবারটি দেহ নিয়ে যাওয়ার পর রেল ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আমার দেহ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু, আমার প্রশ্ন আর ডিএনএ পরীক্ষা করে কি হবে। আক্ষেপ করে শিবকান্তবাবু বলেন, ছেলের দেহ তো ওরা নিয়ে চলে গিয়েছে।
অন্যদিকে, দিনহাটা-১ ব্লকের আমবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে শিবার বাড়ির সদস্যরা সহ প্রতিবেশীরা শোকে মুহ্যমান। পুত্রশোকে কেঁদেই চলেছেন শিবার মা লক্ষ্মী রায়। তিনি বলেন, প্রথমদিন ওর বাবা একজনের ফটো দিয়েছিল। ওঁকে জানাই, ওটা শিবা নয়। পরে আরওএকটি ফটো পাঠালে সেটা ছেলের বলে শনাক্ত করি। শিবার কপালে জন্ডিসের একটি দাগ, আর হাতে লেখা শিবা, দু’টোই ওই ফটোতে ছিল। এভাবে কারও দেহ অন্যকেউ নিয়ে চলে গেল, এটা কী করে সম্ভব। শিবার গ্রামের লোকজনও বিষয়টি জেনেছেন। তাঁরাও রেলের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন। শিবা রায়। দুর্ঘটনার আগের দিন তোলা ছবি।