কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কালচিনি থানার পুলিস জানিয়েছে, মৃতরা হলেন সূর্যপদ পাল (৪১), মিনতি পাল (৭০) ও দেবাশিস সাহা (৩৯)। মিনতিদেবী সূর্যপদবাবুর মা। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হন সূর্যপদবাবুর স্ত্রী পূর্ণিমা পাল ও তাঁদের চার বছরের মেয়ে অদিতি। দেবাশিস সাহা মৃত সূর্যপদবাবুর বন্ধু। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পূর্ণিমাদেবী ও অদিতি কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সূর্যপদবাবু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই মৃতদের বাড়ি কামাখ্যাগুড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। আকস্মিক ওই ঘটনায় শোকাহত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অশিক্ষক সকলেই।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সূর্যপদবাবুর অশীতিপর বাবা ধীরেন্দ্রনাথ পাল বার্ধক্যজনিত কারণে রবিবার রাতে শিলিগুড়িতে মারা যান। মাত্র চারমাস আগে সূর্যপদবাবু শিলিগুড়ি থেকে একটি গাড়ি কেনেন। বাবার মৃতদেহ আনতে নিজের ছোট গাড়িটি নিয়েই রবিবার কালচিনি থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছন তিনি। বাবার মৃতদেহ কামাখ্যাগুড়ির বাড়িতে আনার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সও ভাড়া করেন। রবিবার মাঝরাতে অ্যাম্বুলেন্সে মৃতদেহ নিয়ে সূর্যপদবাবুরা কামাখ্যাগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সামনে ছিল অ্যাম্বুলেন্সটি। পিছনে ছিল সূর্যপদবাবুর ছোট গাড়ি। তিনি নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। গাড়ির সামনের সিটে বসেছিলেন বন্ধু দেবাশিস। পিছনের সিটে সূর্যপদবাবুর মা, স্ত্রী ও মেয়ে।
তদন্তকারী পুলিস অফিসারদের অনুমান, মাঝরাতে রাস্তা ফাঁকা ছিল বলে সূর্যপদবাবু হয়তো প্রচণ্ড গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সামনে বাবার মৃতদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটিও যথেষ্ট গতিতে ছুটছিল। কালচিনির পোড়োবস্তি এলাকায় ৩১সি জাতীয় সড়কে একটি বাঁক আছে। ওই বাঁকেই পৌনে ৩টে নাগাদ সূর্যপদবাবুদের গাড়িটির একেবারে সামনে চলে আসে লরিটি। সূর্যপদবাবুর গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে উল্টো দিক থেকে আসা লরিটিকে।
লরির ধাক্কার অভিঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে সূর্যপদবাবুর গাড়িটির সামনের দিক দুমড়েমুচড়ে যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে চলে আসেন নিমতি ফাঁড়ির পুলিস কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় গাড়ির দরজা কেটে সূর্যপদবাবুদের বের করে আনা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অধ্যাপক সূর্যপদ পাল ও বন্ধু দেবাশিস সাহার। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মিনতিদেবীকেও মৃত ঘোষণা করেন।
বাবার মৃত্যুতে এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন সূর্যপদবাবু। তার উপর গভীর রাতে শিলিগুড়ি থেকে ১৫০ কিমি রাস্তা নিজেই গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। তদন্তকারী অফিসাররা মনে করছেন, মুহূর্তের অসতর্কতার জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত হয় এদিনই। সেখানে সূর্যপদবাবুর দাদা, বউদি ও আত্মীয়স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই দুর্ঘটনার পর কামাখ্যাগুড়ি ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও শোকের ছায়া নেমে আসে। দুর্ঘটনার পর পুলিস লরিটিকে আটক করলেও তার চালক পলাতক। আলিপুরদুয়ারের পুলিস সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দু’জন চিকিৎসাধীন। তদন্ত চলছে। মৃত অধ্যাপক সূর্যপদ পাল। ফাইল চিত্র