বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কোচবিহার জেলার বাইরে আশাপাশের জেলাতেও সাতমাইল সতীশ ক্লাবের কাজ ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে বিহারের বিভিন্ন জায়গায় তারা কাজ করছে। পাশাপাশি ত্রিপুরা, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান থেকেও এখানে অনেকে কৃষি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। এসব কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে সাতমাইল সতীশ ক্লাব ও পাঠাগার পুরস্কৃত হয়েছে।
সাতমাইল সতীশ ক্লাব ও পাঠাগারের সম্পাদক অমল রায় বলেন, একটা ছাতার নীচে সব ধরনের চাষ করা, চাষের সরঞ্জাম, সার, বীজ প্রভৃতি সবকিছু ফার্মার্স প্রোডিউসার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে হবে, এটা আমরা চাই। আগামী দিনে কৃষিপণ্য আমদানি, রপ্তানিও এর মাধ্যমে হবে। আমাদের এখানে এখন স্থানীয় যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য পরামর্শ নিতে আসেন। ২০ জন এখানে কাজ করছেন। তাঁরা নিয়মিত ভাতা পান। ‘ওয়ান ব্লক ওয়ান এফপিও’ এবং ‘ওয়ান ব্লক ওয়ান ক্রপ’ গঠন করা আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে।
কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে কোচবিহার-১ ব্লকে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় সাতের দশকের শুরুতে এই ক্লাবের সূচনা। আর পাঁচটা ক্লাবের মতো এখানেও শুরুর দিকে খেলাধুলো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো। নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ক্লাবের কর্ম তৎপরতা বাড়ে। ২০০৩ সালে টোটাল স্যানিটেশনের কাজে যুক্ত হয়েছিল ক্লাব। ২০০৮ সাল নাগাদ সদস্যরা বুঝতে পারেন, এমন একটা কিছু করতে হবে, যা দীর্ঘসময় ধরে চলে। সেসময় থেকে এখানে কৃষি ক্ষেত্রের কাজ শুরু হয়। আর এরই ফলশ্রুতি হিসেবে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহায়তায় ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে ধান চাষ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ‘জিরো টিলেজ’ পদ্ধতিতে গম চাষের কাজ শুরু হয়। ক্লাবের কয়েকজন সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়ে সাধারণ কৃষকদের জমিতে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। এরই মাঝে নাবার্ডের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হয়। তৈরি করা হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী। স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু হয়। ২০১৪-’১৫ সাল নাগাদ ক্লাব ট্রাক্টর, থ্রেশার মেশিন, ধান রোপনের মেশিন কেনে। এই মেশিনগুলি ভাড়া দিতে শুরু করে। ক্লাবের সদস্যরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিনা কর্ষণে বীজ বপণের কাজ করতে থাকেন। ক্লাবের আয় শুরু হয়। এরই মধ্যে ক্লাব সোসাইটি রেজিস্ট্রেশনের আওতায় চলে আসে।
২০১৫ সালেই উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংরক্ষণ কৃষি প্রকল্পে যুক্ত হয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ শুরু করে। এতে কৃষকের জমিতে একপাশে প্রথাগত ও একপাশে জিরো টিলেজ পদ্ধতি চাষ হতো। এতে গমের পাশাপাশি ভুট্টা, পাট, সর্ষে প্রভৃতি চাষ হতে থাকে। কৃষিদপ্তর গমের প্রদর্শনী ক্ষেত্র চালু করলে সেখানেও ক্লাব অংশ নেয়। ২০১০ সাল থেকে নাবার্ডের তত্ত্বাবধানে ফার্মার্স ক্লাব গঠন করতে শুরু করে সাতমাইল সতীশ ক্লাব ও পাঠাগার। জেলাজুড়ে প্রায় ৩৫০টি এ ধরনের ক্লাব গড়ে ওঠে। এখানে কৃষকদের আধুনিক চাষের প্রশিক্ষণ, ব্যাঙ্কের নানা প্রকল্প সম্পর্কে জানানো হয়। এতেই ক্লাবের মূল ভিত গড়ে ওঠে। সংরক্ষণ কৃষির মাধ্যমে প্রায় সাত হাজার কৃষক কাজ শুরু করেন। ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সাল থেকে নাবার্ডের প্রকল্পের অধীনে ফার্মার্স প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন ও পরবর্তীতে প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন প্রোমোটিং ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করে। এর মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষ, প্রশিক্ষণ, বীজ, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে ফসলের বিপণন পর্যন্ত করা হচ্ছে। ক্লাব নিজেদের উদ্যোগেও ৪০টি ফার্মার্স প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন গড়ে তুলেছে।