কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
গত জানুয়ারি মাসে রায়গঞ্জের এক দম্পতির কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লোনের মেসেজ আসে। স্বল্প সুদে লোনের অফার দেওয়া হয়। সেসময় তাঁদের টাকার খুব প্রয়োজন থাকায় দম্পতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তাঁদের মোবাইলে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়। তাতে ক্লিক করতে বলা হয়। লোন প্রদানকারী সংস্থার কথা মতো তাঁরা ওই লিঙ্কে ক্লিক করেন। ওই লিঙ্কে ক্লিক করতেই মোবাইলটি হ্যাক হয়ে যায়। এদিকে লোন প্রক্রিয়ার জন্য আধার কার্ড, প্যান কার্ড সহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি চাওয়া হয় দম্পতির কাছে। তাঁরা লোনের জন্য সমস্ত নথি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আগেই পাঠিয়ে রাখেন।
ওই দম্পতিকে লোন দেওয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, যেদিন তাঁরা লোন নেবেন, তার ১৫ দিন পর লোনের টাকা সুদ সহ ফেরত দিতে হবে। কিন্তু, টাকা সময়মতো জোগাড় না হওয়ায় ওই দম্পতির সুদ এবং আসল ফেরাতে কিছুদিন সময় লাগে। পরবর্তীতে তাঁরা সুদ সহ লোন পরিশোধ করেন। এরপরও ওই দম্পতির কাছে লাগাতার ওই একই নম্বর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কল আসতে থাকে। যেহেতু তাঁরা নির্ধারিত সময়ে লোন শোধ করতে পারেননি, তাই তাঁদেরকে হুমকি দিয়ে আরও টাকা চাওয়া হয়। এরপর ওই দম্পতি রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানালে তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে পুলিসের হাতে। সাইবার ক্রাইম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে নম্বর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কল এসেছিল, সেই নম্বর মহারাষ্ট্রের এক কৃষকের। এমনকী তাঁর কাছে কোন স্মার্টফোন নেই। তদন্তে জানা যায়, নেপালের বিরাটনগর থেকে কেউ বা কারা ওই কৃষকের নম্বর হ্যাক করে। তারপর সেই নম্বর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কল করে এই প্রতারণা চালায় চক্রটি।
সাইবার প্রতারণা এখানে শেষ নয়। থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক সময়ে জনপ্রিয় সিনেমার লিঙ্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠিয়েও প্রতারণা করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে রায়গঞ্জের এক ব্যক্তির কাছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার নাম করে একটি কল আসে। ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, তিনি সময় মতো তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মেটাননি। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। ওই কল পাওয়ায় পর ওই ব্যক্তি দুশ্চিন্তায় পড়ে সাইবার প্রতারকদের ফাঁদে পা দেন। বিদ্যুতের বিল মেটানোর নাম করে প্রতারকরা তাঁকে বলে, আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) গিয়েছে সেটা জানান। ওই ব্যক্তি ওটিপি শেয়ার করতেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে চারবারে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে নেয় প্রতারকরা।
সাইবার ক্রাইম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম তিনবারে ৫০ হাজার টাকা এবং চতুর্থবারে ২৫ হাজার টাকা ট্রান্সফার হয়। এ ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা যে অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে, সেই অ্যাকাউন্ট নম্বরটি পুলিস চিহ্নিত করতে পারলেও বাকি টাকা কোন অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, তার অবশ্য কোনও হদিশ মেলেনি। ২৫ হাজার টাকা উদ্ধারের জন্য সাইবার ক্রাইম থানা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে জানিয়েছে। এই ক্ষেত্রেও নেপালের সাইবার প্রতারণা চক্রের হাত আছে বলে পুলিস মনে করছে।
রায়গঞ্জ পুলিস জেলার এসপি সানা আখতার বলেন, কোনওরকম লিঙ্কে ক্লিক করার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। যদি বুঝতে পারেন, সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তবে দ্রুত থানার দ্বারস্থ হন। এক্ষেত্রে তদন্ত করতে সুবিধা হয়।