বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সমীর হার্টের চিকিৎসার জন্য সপ্তাহ খানেক আগে পাটনা গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল তিনটি ব্যাগ। এদিন অভিশপ্ত কামরার পাশে দাঁড়িয়ে সমীর বলেন, ব্যাগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নগদ ৫০ হাজার টাকা ছিল। চিকিৎসা করিয়ে কিছু রিপোর্ট, ডাক্তারের কাগজপত্র, ওষুধ, জামাকাপড় সহ অবশিষ্ট টাকা ব্যাগে রাখা ছিল। সেসব হারিয়ে গিয়েছে। সেই ব্যাগগুলি খুঁজতে এসেছি। জিআরপিকে ব্যাগের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি।
সেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সমীর বলেন, তিস্তা রেলসেতু পেরিয়ে ট্রেনে অস্বাভাবিক একটি ঝাঁকুনি হয়। ওই সময়ে প্রচণ্ড গতিতে ছিল ট্রেন। আচমকা আমরা যাত্রীরা একেঅপরের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। আমি কামরাতেই আটকে যাই। বুকে, মাথায়, পায়ের উপর ট্রেনের ভারী যন্ত্রাংশ পড়ে। নড়চড়া করতে পারছিলাম না। ট্রেনের লাইট নিভে যায়। চারদিক থেকে ভেসে আসছিল শুধু চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ। মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখতে পেরেছি। হাতে থাকা মোবাইলের টর্চ লাইট জ্বালিয়ে নিভিয়ে সঙ্কেত দিতে থাকি। কিন্তু, দীর্ঘক্ষণ কেউ আমাদের কামরার দিকে আসছিলেন না। পরে কয়েকজন আসেন। তখন ঘনঘন মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালাতে থাকি। তাঁরাই আমাকে আটকে থাকা অবস্থায় দেখতে পান। তাঁরা ওসব সরিয়ে আমাকে বাঁচান। প্রাণ ফিরে পেয়েছি। যাঁরা উদ্ধার করতে এসেছিলেন, তাঁরা বারবার আমাকে সাহস দিয়ে গিয়েছেন। হার্টের রোগী হলেও আমি মনকে ওই সময়ে শক্ত করে রেখেছিলাম। এভাবে প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা চাপা পড়ে থেকেও তাই জীবনযুদ্ধে ফিরতে পারলাম। রেলের দক্ষ শ্রমিকরা গ্যাস কাটার দিয়ে কামরার লোহার চাদর কেটে আমাকে নিরাপদে বাইরে বের করে আনেন। গোটা শরীরে আঘাত ছিল। প্রথমে আমাকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে জলপাইগুড়ি পাঠানো হয়েছিল। হারানো ব্যাগ তিনটির খোঁজে এদিন আসি। আশা করি জিআরপি আমার ব্যাগগুলি খুঁজে দিতে সহাযোগিতা করবে।