নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: একটানা ভারী বর্ষণে গত ৪৮ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন ব্যাহত হল। জেলা সদর, ক্রান্তি, ময়নাগুড়ি ব্লক সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়। মোট ১২টি গ্রামে তিস্তার জল ঢুকে তৈরি হয়েছে প্লাবন পরিস্থিতি। সিকিম, ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে রীতিমতো ফুঁসছে তিস্তা সহ জেলার অন্যান্য নদীগুলি। প্রতিটি নদীতেই বেড়েছে জলস্তর। উদ্ভূত এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালানো, দুর্গত স্থান পরিদর্শন, ত্রাণ বিলির মতো একাধিক আগাম সতর্কতামূলক কাজ তৎপরতার সঙ্গে সামাল দেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনভর দফায় দফায় জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, ডিআইজি (জলপাইগুড়ি রেঞ্জ) আন্নাপা ই, পুলিস সুপার দেবর্ষি দত্ত সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা বিভিন্ন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁরা দুর্গতদের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করেন, ত্রাণের ব্যবস্থা করে দেন। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, এদিন বিকেল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৮৭৪ জনকে প্রশাসন উদ্ধার করে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সদর ব্লকের পাঁচটি, ক্রান্তির একটি, ময়নাগুড়ির পাঁচটি এবং জলপাইগুড়ি পুর এলাকায় একটি জায়গায় নদীর জল ঢুকে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা সবদিকে নজর রাখছি। দুর্গতদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ময়নাগুড়ি ও সদর ব্লকের একাধিক জায়গা, নদীর পাড় এলাকা, ফ্লাড শেল্টারগুলি জেলাশাসক পরিদর্শন করেন। শুকনো খাবার, ত্রিপল ইত্যাদি যথাযথভাবে বণ্টন হয়েছে কিনা, তাও তিনি সরেজমিনে তদারকি করেন। বুধবার বিকেলে কচুয়া বাহিরচর স্কুলে দুর্গতদের রাখার ব্যবস্থাও সরেজমিনে তদারকি করেন জেলাশাসক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বিবেক ভাসমে, মহকুমা শাসক (সদর) সুদীপ পাল।
প্রসঙ্গত, জেলায় তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকা প্রায় ১১০০ কিমি। পাহাড়ে প্রবল বর্ষণের সময় সেই অসংরক্ষিত এলাকাগুলি দিয়েই মূলত নদীর জল চলে আসে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগেভাগেই জেলার সমস্ত ব্লক আধিকারিক, পঞ্চায়েত প্রধানদের সতর্ক করায় আগাম ব্যবস্থাপনা হিসেবে নিচু এলাকা থেকে দ্রুত মানুষকে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে বাহিরচর সহ তিস্তার বিভিন্ন চর এলাকায় ধান সহ অন্যান্য সব্জির ক্ষতি হয়েছে। এদিন এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্সের দল বিভিন্ন দুর্গম জায়গায় পৌঁছে উদ্ধার কাজ চালায়। পুলিসও কয়েকটি জায়গা থেকে মানুষকে সুরক্ষিত জায়গায় সরিয়ে আনে। মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তায় জলস্তর বাড়তে থাকায় জলপাইগুড়ির তিস্তা সেতু সংলগ্ন বিবেকানন্দ পল্লিতে ওই রাতেই বিশাল বাহিনী নিয়ে পৌঁছন পুলিস সুপার। রাতেই পুলিসের গাড়িতে করে সেখানকার বাসিন্দাদের স্থানীয় ধর্মদেব স্কুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিস সুপার বলেন, ওই জায়গায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বাস। বেশিরভাগ বাড়িতেই জল ঢুকতে শুরু করায় বাসিন্দাদের সেখান থেকে দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। ওই অঞ্চলে কয়েকটি জায়গায় বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলি প্রশাসন সাময়িকভাবে মেরামত করার ব্যবস্থা করছে।