সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: প্রবল বর্ষণে উথাল পাথাল তোর্সা। বুধবার সকালে শৌচকর্ম করতে গিয়ে সেই নদীর পাড় ভেঙেই জয়গাঁর ছোট মেচিয়াবস্তির একই পরিবারের দুই কিশোরী তলিয়ে যায়। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, ভেসে যাওয়া দুই কিশোরীর নাম রুকসা খাতুন ও মণীষা খাতুন। প্রথমজনের বয়স ১০ বছর, দ্বিতীয়জন আট বছরের। উত্তাল নদীতে তলিয়ে যাওয়া দুই বোনকে উদ্ধার করতে সকাল থেকেই বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের উদ্ধারকারী দল তোর্সা নদীতে তল্লাশি চালায়। যদিও বিকেল পর্যন্ত দুই নাবালিকার কোনও খোঁজ মেলেনি। এদিকে, টানা বৃষ্টিতে আলিপুরদুয়ারের তোর্সা, কালজানি, বাসরা, পানা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, গরম, ডিমা সহ সমস্ত নদীতে জল বেড়ে যায়। সকালের দিকে হাসিমারায় তোর্সা নদীতে হলুদ সঙ্কেত দেয় সেচদপ্তর। জয়গাঁর কাছে ছোট মেচিয়াবস্তি ও বড় মেচিয়াবস্তি, দু’জায়গায় তোর্সা নদীর প্রায় ৬০০ মিটার পাড় জলের তোড়ে ভেসে যায়। এরফলে তোর্সার জল ঢুকে ছোট মেচিয়াবস্তিতে ১২টি পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সেচদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরদুয়ারে ১১০ মিলিমিটার ও হাসিমারায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কালচিনির বিডিও প্রশান্ত বর্মন বলেন, ছোট মেচিয়াবস্তিতে তোর্সার নদীতে তলিয়ে গিয়েছে দুই কিশোরী। তাদের উদ্ধার করতে তোর্সায় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের টিম নামানো হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত ওই দুই কিশোরীর হদিশ মেলেনি। তোর্সার জল ঢুকে ছোট মেচিয়াবস্তিতে কয়েকটি পরিবার জলমগ্ন হওয়ায় পরিবারগুলিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিন ছোট মেচিয়াবস্তি ও বড় মেচিয়াবস্তিতে তোর্সার ওই পাড় ভাঙন দেখতে যান জয়গাঁ ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। তিনি বলেন, দুই জায়গায় তোর্সার প্রায় ৬০০ মিটার পাড় ভেঙে গিয়েছে। ভাঙনের বিষয়টি আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্রনাথ মিনাকে জানিয়েছি। অন্যদিকে, হাউড়ি, বাংরি, তিতি ও দয়ামারা নদীর প্রবল জলস্ফীতির কারণে এদিন সকালের দিকে মাদারিহাট সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওই ব্লকের টোটোপাড়া ও বল্লালগুড়ি। বিডিও শরণ তামাং বলেন, দুপুরে মাদারিহাট-টোটোপাড়া রাজ্য সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। হলং নদীর জলস্ফীতির জন্য হলং নদীর উপর মাদারিহাটে পর্যটন দপ্তরের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে যাওয়ার সাঁকো জলের তোড়ে ভেসে যায়। ফলে লজে যাতায়াত করতে বিপাকে পড়েন লজের কর্মী ও পর্যটকরা। এদিন সকালে ছোট মেচিয়াবস্তির বাসিন্দা পেশায় শ্রমিক সফিকুল আনসারির দুই মেয়ে বাড়ির পাশে তোর্সা নদীর ধারে শৌচকর্ম করতে যায়। তখন ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা তোর্সা নদী রীতিমতো ফুঁসছিল। এই পরিস্থিতিতে ওই দুই কিশোরী নদীর পাড় ভেঙে আচমকা জলে তলিয়ে যায়। আশপাশের বাসিন্দারা তাদের নদীতে তলিয়ে যেতে দেখে ছুটে আসেন। কিন্তু, ততক্ষণে ওই দুই কিশোরী জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। জেলাশাসকের নির্দেশে এদিনই তোর্সার পাড় ভাঙন মেরামতে ছোট ও বড় মেচিয়াবস্তিতে যান সেচদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা। কিন্তু, খরস্রোতা তোর্সার জলের স্রোতের তীব্রতা এতটাই যে, সেখানে এখনই পাড় বাঁধানো সম্ভব নয় বলে জেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। জল নামলে পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হবে।
সেচদপ্তরের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়ম গোস্বামী বলেন, টানা বৃষ্টিতে জেলার সব নদীতেই জল বেড়েছে। হাসিমারায় তোর্সা নদীতে হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। মাদারিহাটে জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে যেতে হলং নদীর উপর কাঠের পুরনো সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে অস্থায়ীভাবে যাতায়াত চলছিল। বুধবার সকালে জলের তোড়ে বাঁশের সাঁকোটিও ভেসে যাওয়ায় লজে যেতে ও আসতে বিপাকে পড়েন পর্যটকরা। পূর্তদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, জল নামলেই ওই ট্যুরিস্ট লজের সামনে হলংয়ে পাকা সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।