সংবাদদাতা, দিনহাটা: এ মাসের ৩০ তারিখ দিনহাটা বিধানসভা উপনির্বাচন। তার আগেই দিনহাটা কেন্দ্রে বিজেপির কোমর ভেঙে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মণ্ডলের সভাপতি, সম্পাদক ও মহিলা মোর্চার বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব রবিবার গেরুয়া সঙ্গ ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিজেপির কোচবিহার জেলা কমিটির সম্পাদক সুদেব কর্মকার। এদিন দিনহাটার শহিদ কর্নারে থাকা তৃণমূলের পার্টি অফিস সুভাষ ভবনের সামনে যোগদান সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির ওই নেতৃবৃন্দ জোড়াফুল শিবিরে নাম লেখান। এদিন তৃণমূলের দলবদল কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উদয়ন গুহ, মেখলিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী, দলের কোচবিহার জেলা কমিটির প্রাক্তন সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় প্রমুখ। এছাড়াও আলিপুরদুয়ারের বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতা তথা জয়গাঁ ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মাও উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের একঝাঁক নেতানেত্রী এদিন বিজেপি ছেড়ে আসাদের হাতে দলীয় ঝাণ্ডা তুলে দিয়ে স্বাগত জানান। দিনহাটা বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে বিজেপিতে প্রায় প্রতিদিনই ভাঙন ধরাতে পেরে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবির। একইসঙ্গে তাদের পরাজিত এই আসনটি জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত বলে দাবি করছে জোড়াফুল নেতৃত্ব। এদিন ওই যোগদান শিবিরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের প্রাক্তন সভাপতি পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, আমরা একুশের বিধানসভা ভোটে জেতা আসনটি মাত্র ৫৭ ভোটে হেরে গিয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম ৫৭ হাজার ভোটে জিতে যাব। কিন্তু, আজ বলছি, লক্ষাধিক ভোটে আমরা জিতব। বিজেপির ঘর ভেঙে স্রোতের মতো ওই দলের লোকজন, নেতা-কর্মী আমাদের দলে আসার জন্য মুখিয়ে আছেন। আমরা দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশমতো ওঁদের ধাপে ধাপে দলে নিচ্ছি। এবার উপনির্বাচনে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুদেব কর্মকার অবশ্য বিজেপির পুরনো নেতৃত্বকে গুরুত্ব না দেওয়া, নিশীথ প্রামাণিককে জয়ী করার পরেও তিনি বিধায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্যই বিজেপি ছেড়েছেন বলে স্পষ্টভাষায় বলেন। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব সুদেববাবু সহ আরও একঝাঁক নেতা-কর্মীর দলবদলকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাদের দাবি, সাধারণ মানুষ বিজেপির পাশে রয়েছে। কে কোথায় গেল, তা তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায় বলেন, তৃণমূলের পক্ষ থেকে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেই চাপে পড়ে সুদেববাবুর মতো অনেকেই তৃণমূল শিবিরে গিয়ে নাম লেখাচ্ছেন। এসবের কোনও প্রভাবই উপনির্বাচনের পড়বে না। বিজেপি দিনহাটা আসনটি জিতেছিল। উপনির্বাচনে এই আসন বিজেপি ধরে রাখবে। ভোটের ফলের দিনই সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৫৭ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন কোচবিহারের বিজেপি এমপি নিশীথ প্রামাণিক। পরবর্তীতে তিনি সাংসদ পদে থেকে যান এবং বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেই কারণে এই আসনে উপনির্বাচন হতে চলেছে। এবার উদয়ন গুহের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডল এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুর রউফ। উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক ছিলেন অশোকবাবু। পরে তিনি দলবদল করে বিজেপিতে যান। রাজ্যে বর্তমানে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। এই অবস্থায় বিজেপিকে যে অনেক কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে, তা বিজেপি নেতৃত্ব ভালো করেই জানে। তারপরও দিনহাটায় সাধারণ মানুষ বিজেপির পক্ষে রয়েছে বলে তাদের দাবি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষ কাদের পক্ষে রায় দেয়, তা জানতে নির্বাচনের ফল বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।