নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: ইংলিশবাজার শহরের এক ছাত্র ছ’বছর ধরে মাটির দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে পুজো করছে। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বনাথ মোড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রের নাম অর্ঘদীপ দাস। ওই ছাত্রের এই প্রচেষ্টাকে এলাকার মানুষ সাদরে গ্রহণ করছে। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তার প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন বলে অর্ঘদীপ জানিয়েছে। ফলে ওই ছাত্রের আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছে। আগের তুলনায় এবার প্রতিমার আকৃতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী দিনে বড় আকারে পুজোর ইচ্ছা রয়েছে তার। অর্ঘদীপ শহরের অক্রুরমণি করোনেশন ইনস্টিটিউশনে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতে গিয়ে তাকে প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দিতে দেখা গেল। এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় জানায়, ছোট থেকেই সে মাটি দিয়ে পুতুল, খেলনা গাড়ি প্রভৃতি তৈরি করত। মাঝেমধ্যে প্রতিমাও তৈরি করত। বছর ছ’য়েক আগে হঠাৎ সে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে। এতদিন সে ছোট সাইজের প্রতিমা তৈরি করত। এবার একচালার মাঝারি মাপের প্রতিমা তৈরি করেছে। তারজন্য অবশ্য সে এক মৃৎশিল্পীর কাছে কিছুদিনের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। অর্ঘদীপ বলে, শৈশব থেকেই কাদামাটি দিয়ে নানা সামগ্রী তৈরি করতাম। একবার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে ফেলি। নিজ হাতে গড়া প্রতিমা আমিই পুজো করি। প্রতিমার সব কাজ আমি একাই করি। আমার পুজো দেখতে অনেকেই ভিড় জমান। অর্ঘদীপের মা পলি দাস বলেন, ছেলে দুর্গা প্রতিমা গড়ে পুজো করছে। ছেলের কাজে বাধা দিইনি। আমরা নিষ্ঠাভরে পুজোর আয়োজন করি। দুর্গার পাশাপাশি অর্ঘদীপ বাড়িতে কালী প্রতিমাও তৈরি করে। সে বাড়িতেই কালীপুজো করে বলে অর্ঘ্যর বাবা পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নীলেন্দু দাস জানিয়েছেন। নীলেন্দুবাবু বলেন, ছেলের আঁকার হাত ছোট থেকেই ভালো। মুখে কথা ফোটার আগে থেকেই ছেলে রং পেন্সিল হাতে তুলে নিয়েছিল। ছোটবেলাতেই সাদা খাতা, দেওয়ালে আঁকিবুঁকি কাটত। পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজিত অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অর্ঘ্য পুরস্কার পায়। তিনি আরও বলেন, পরের বার ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তবে পুজো সে বন্ধ করতে চায় না। পরীক্ষার প্রস্তুতির মাঝেই একমাস ধরে প্রতিমা তৈরি ও পুজোর জোগাড় করতে চায় বলে আমাদের জানিয়েছে। এব্যাপারে আমরাও তাকে কোনও বাধা দিতে চাই না।
এদিকে, অর্ঘ্য যাতে পুরসভা বা প্রশাসনের কাছে প্রতিমা নির্মাণের জন্য পুরস্কার পায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বারস্থ হবেন বলে তার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। এবিষয়ে ওই ছাত্রের প্রতিবেশী কৈলাশচন্দ্র দাস, প্রসেনজিৎ মাহাত বলেন, অর্ঘ্যর পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীরা মেতে ওঠে। ওর প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ যাতে ওকে পুরস্কৃত করা হয় তার জন্য আমরা পুরসভা, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব। -নিজস্ব চিত্র