সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানার নুরপুর গ্রাম। সারা বছর নুরপুর গ্রামের মানুষ হাতির হামলার ভয়ে তটস্থ থাকত। দলবদ্ধ হাতির হামলার ভয়ে গ্রামের মানুষ কোনও ফসলই ঘরে তুলতে পারত না। শেষ পর্যন্ত রাজ্য কৃষিদপ্তর ও উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল ঘেরা নুরপুর গ্রামের মানুষ ঘরে ঘরে মৌমাছি পালন করা শুরু করেছেন। আর তাতেই কেল্লাফতে। মৌমাছির জ্বালায় গত এক বছর ধরে বক্সা জঙ্গলের হাতির দল আর নুরপুর গ্রামে পা মাড়ায় না। ধান, পাট ও আনাজ সব্জি সহ সব ধরনের কৃষিজ ফসল চাষ হয় নুরপুর গ্রামে। হাতি আসা বন্ধ হওয়ায় গ্রামে এখন ধানের উৎপাদনও বেড়েছে। বেড়েছে আম ও লিচু সহ অন্যান্য ফল চাষের এলাকাও। মধু চাষ করে গ্রামের মানুষ আয়ের নতুন দিশাও খুঁজে পেয়েছেন। মৌমাছিদের মধু সংগ্রহের জন্য এখন ওই গ্রামে কমপক্ষে ১০০ বিঘা জমিতে সর্ষের চাষ হয়। হাতির অত্যাচারে যখন সবদিক থেকেই জর্জরিত নুরপুর গ্রামের মানুষ তখনই উদ্ধার কর্তা হিসেবে যেন এগিয়ে এলেন স্থানীয় সাঁওতালপুর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক সদানন্দ চক্রবর্তী। সদানন্দবাবু বলেন, গ্রামবাসীদের অনুরোধে বিকল্প খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের পরমার্শ নেওয়া শুরু করি। এখন মৌমাছিদের কল্যাণে গ্রামের মানুষ এক একটি বাক্স থেকে প্রতি মাসে ২০ কেজি করে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌমাছিদের গুঞ্জনে হাতির দলের অত্যাচার থেকে রেহাই মিলেছে গ্রামটির। মধু ছাড়াও গ্রামের মানুষের বিভিন্ন ফসলেরও উৎপাদন বেড়েছে। কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল কুমার সাহু বলেন, নুরপুরের প্রকল্পের কাজ আমরা ২০২০ সাল থেকে শুরু করি। হাতি মানুষে সংঘর্ষ কমাতে আফ্রিকার বেশকিছু এলাকার পরীক্ষিত মডেল হিসেবে নুরপুর গ্রামে সর্ষে চাষ করে মৌমাছি পালনের উপর জোর দেওয়া হয়। মৌমাছিদের জন্য ওই গ্রামে আম ও লিচু চাষেও জোর দেওয়া হয়। তাতেই এই সাফল্য এসেছে।
আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের নুরপুর গ্রামে এই মৌমাছি পালনের জন্য আনা হয়েছে ‘সেরেনা ইণ্ডিয়া’ ও ‘সেরেনা মিলিফের’ নামে মৌমাছির উন্নত প্রজাতি। কৃষিদপ্তর নুরপুরে চাষিদের জৈব চাষেরও পরামর্শ দিয়েছে। সব মিলিয়ে মৌমাছিদের দৌলতে নুরপুরের মানুষ হাতির হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। মৌমাছিদের জন্য তাঁদের বাড়িঘর ও ফসল বেঁচেছে। উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, হাতিরা স্বভাবে মৌমাছির কামড় ও গুঞ্জন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। অন্যান্য বন্যপ্রাণীদেরও বিরক্তির কারণ মৌমাছি। এটা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।