বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
গবেষকদের মতে, আর্যদের আধিপত্য যাঁরা মানতো না আর্যরা তাঁদের কাউকে অসুর, কাউকে রাক্ষস আবার কাউকে দুর্বৃত্ত বলে অভিহিত করেছিল। আসলে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে আর্যরাই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষদের মহিষাসুরের বংশধর বলে অভিহিত করেছিল। বেদ, উপনিষদ সহ সমস্ত ধর্মগ্রন্থেই সুস্পষ্টভাবে এর উল্লেখ আছে। মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দুর্গা। এটা কল্পিত কাহিনী। এই কাহিনীর সঙ্গে অসুর সম্প্রদায়ের কোনও সম্পর্ক নেই।
অসুর সম্প্রদায়ের অতীত ও বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু মূলস্রোতেই আছে। অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরাও সমাজের আর পাঁচজনের মতোই নতুন জামাকাপড় পরে দুর্গা প্রতিমা দর্শনে যায়। দুর্গাপুজোর ভিড়েও মিশে যায়। আলিপুরদুয়ারের লোকসংস্কৃতি গবেষক ও বঙ্গরত্ন প্রমোদ নাথ বলেন, অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ দ্রাবিড় সভ্যতার মানুষ। ঐতিহাসিক ও নৃতাত্বিক মতেই তা সত্য ও বিজ্ঞানসন্মত। আসলে আর্যরাই শোষণের উদ্দেশ্যে অসুর সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে মহিষাসুরের বংশধর বলে অভিহিত করেছিল। কাজেই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ দুর্গা প্রতিমা দেখতে যান না এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গেই আছে।
ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগান, বনবস্তি ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতেই ভালোবাসে অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষরা। আলিপুরদুয়ার জেলায় ৫৪টি জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে অন্যতম এই অসুর সম্প্রদায়। আলিপুরদুয়ারের কালকূট বনবস্তি, গরম বনবস্তি, মাঝেরডাবরি, পানিয়ালগুড়ি, শিবকাটা ও তপসিখাতার শালবাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে আছে অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার কেদারহাট ও ইন্দ্রেরকুঠি গ্রামেও আছে অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। জলপাইগুড়ি জেলায় অসুর সম্প্রদায়ের মানুষের সবচেয়ে বেশি বসবাস ক্যারন ও জিতি চা বাগানে। অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বিশেষ একটি এলাকাতেই পরিবার নিয়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে।
প্রসঙ্গত, চা বাগান ও বনবস্তি পঞ্চায়েতের আওতায় এলেও অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষদের দারিদ্রতা এখনও ঘোচেনি। বামআমল থেকে সরকারি নানা প্রকল্প থেকেও তারা বঞ্চিত ছিল। তবে রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষেরা এখন স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী ও সবুজসাথী সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষরা অনেকে নিজেদের ধর্ম পাল্টে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। মাঝেরডাবরি চা বাগান এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের রামকুমার টোপ্পো বলেন, আমরা অসুর জনগোষ্ঠীর মানুষ। কিন্তু, অসুর পদবী শুনতে খারাপ লাগে বলে ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি করার সময় বাবা-মা টোপ্পো করে দিয়েছে।