সংবাদদাতা, গঙ্গারামপুর: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হাটেবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ঝাড়খণ্ডের মহিলা গ্যাং। পরপর কয়েকটি চুরির ঘটনার তদন্ত করে জেলা পুলিস এমনই তথ্য পেয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের তিন পাহাড়ি এলাকা থেকে দুষ্কৃতীদের ওই গ্যাং জেলায় এসেছে। যার অধিকাংশই মহিলা। তারা হাটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন চুরি করছে। এই অপারেশনে কাজে লাগানো হচ্ছে শিশুদের। এনিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। জেলায় একাধিক বড় হাট রয়েছে। সেই হাটগুলিকে টার্গেট করে ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা হাত সাফাইয়ের কাজ করছে। মোবাইল ফোন চুরির গ্যাং অল্প টাকার বিনিময়ে চোরাই বাজারে সেই ফোন বিক্রি করে দিচ্ছে। জেলায় একাধিক দোকান পুরনো মোবাইল ফোনগুলি জলের দামে কিনে নিচ্ছে। বিল বা উপযুক্ত কাগজ ছাড়াই সেই ফোন স্কুলছুট পড়ুয়াদের হাতে অল্প দামে পৌঁছে যাচ্ছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ফোন চুরি হওয়ার পরেও গ্রাহকরা অভিযোগ দায়ের করেন না। অনেক ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত গ্রাহকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গঙ্গারামপুরের মহকুমা পুলিস আধিকারিক দীপকুমার দাস বলেন, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের তিন পাহাড়ি এলাকার কিছু মহিলা দুষ্কৃতী শিশুদের দিয়ে এমন অপরাধ সংগঠিত করছে। এ ব্যাপারে থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিস হাটেবাজারে নজরদারি চালাচ্ছে। এছাড়াও এলাকায় একাধিক শিশু নিয়ে হিন্দিভাষী মহিলারা সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করলে সঙ্গে সঙ্গে তা থানায় জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা একাধিক সময় বিভিন্ন থানায় মোবাইল চুরির অভিযোগের পর তা উদ্ধার করেছি। মহকুমায় কোম্পানির বিল ছাড়া কোনও ফোন বিক্রি চলবে না। আমরা একাধিক মোবাইলের দোকানে তল্লাশি চালিয়েছি। গ্রেপ্তারও হয়েছে। লাগাতার সেই তল্লাশি চলবে। জেলার গঙ্গারামপুর মহকুমার শিববাড়ি, সরাই, কুশমণ্ডি, হরিরামপুর ও বালুরঘাটের কামারপাড়া হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই চুরির ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশই মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গারামপুর মহকুমার চারটি থানায় মাসে গড়ে ১০টি করে মোবাইল চুরির অভিযোগ আসছে। সম্প্রতি হরিরামপুর থানার পুলিস চোর সন্দেহে ঝাড়খণ্ডের এক শিশুকে ধরে। তবে ওই শিশুর তিন সঙ্গী ও গ্যাংয়ের মাথা এক মহিলা পালিয়ে যায়।
ওই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিস অফিসরারা জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে মালদহ জেলার গঙ্গা পেরিয়ে তারা এই জেলায় এসেছে। শিশুদের মাথার চুল আলুথালু। ওদের পোশাক নোংরা। মূক-বধির সেজে ওরা হাটেবাজারে ঘুরে বেড়ায়। এর ওর কাছে খাবারের জন্য টাকা চায়। ব্যবসায়ীরা কিছুটা অন্যমনস্ক হলেই তারা মোবাইল নিয়ে পালায়। স্মার্ট ফোন চুরি করে জেলায় বা মালদহে ৩০০-৫০০ টাকায় তারা বিক্রি করে দিচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা চাইল্ড লাইন কমিটির সদস্য সুরজ দাস বলেন, প্রতি মাসে গড়ে পাঁচটি শিশু চাইল্ড লাইনে আসে। কেউ মোবাইল চুরি করে, কেউ আবার বাড়িতে চুরি করে ধরা পড়ে। বেশিরভাগ শিশু তিন পাহাড়ি ও সাহেবগঞ্জ এলাকা থেকে জেলায় আসছে। শিশুদের মাথার উপর গ্যাং রয়েছে। তারাই শিশুদের দিয়ে এসব করাচ্ছে। ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খবর চলে যায় গ্যাংয়ের মাথার কাছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঝাড়খণ্ডের শিশুরা এলেই তিনমাস করে চাইল্ড লাইনে রাখতে হবে। তবেই শিশুদের দিয়ে অপরাধ জগতের কাজ করা বন্ধ হবে। পরিবারের হাতে শিশুদের তুলে দিলেই আবার সেই কাজে ফিরবে। আমাদের টার্গেট চক্রকে ভেঙে দেওয়া।