সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: এবার বিধানসভা ভোটে আলিপুরদুয়ারের পাঁচটি আসনেই জিতেছে বিজেপি। সবক’টি আসনে জিতলেও ভোটের পরে কিন্তু জেলাজুড়ে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য, মণ্ডল ও বুথ সভাপতিদের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। ইতিমধ্যেই বিজেপির বহু কর্মী ও পঞ্চায়েত সদস্য পদ্মফুল ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। নিচুতলায় দলের এই ভাঙনে রীতিমতো শঙ্কিত ও দিশাহারা বিজেপি। 
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, যেহেতু তৃণমূল রাজ্যে সরকারে আছে সেই কারণে উন্নয়নমূলক কাজের স্বার্থে নিচুতলায় বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য, মণ্ডল ও বুথ পদাধিকারীরা জোড়াফুল শিবিরে ভিড়ছেন। জেলার ৬৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে গত পঞ্চায়েত ভোটে আটটি দখল করেছিল বিজেপি। ৫৮টিতে জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু, পঞ্চায়েত ভোটের পরেপরেই  দু’টি পঞ্চায়েত অবশ্য বিজেপির হাতছাড়া হয়। 
বর্তমানে জেলায় বিজেপির দখলে থাকা ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ফালাকাটার ধনীরামপুর-১ ও জটেশ্বর-১ এই দু’টি পঞ্চায়েতও বিজেপির হাতছাড়া হতে চলেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিজেপির দখলে থাকা ওই দু’টি পঞ্চায়েতের সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ফালাকাটার ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়ার সম্ভবনা বিজেপি নেতৃত্বও উড়িয়ে দিতে পারছে না। 
তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, আমরা অন্য দলের কোনও নেতা-কর্মী কাউকেই জোর করে দলে নিচ্ছি না। কিন্তু, রাজ্যে যেহেতু আমাদের সরকার আছে তাই বিজেপির পঞ্চায়েত, মণ্ডল ও বুথ স্তরের পদাধিকারীরা উন্নয়নের কাজে শামিল হতে স্বেচ্ছায় আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। 
বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, তৃণমূল সরকারে আছে। তাই তৃণমূল নেতৃত্ব মিথ্যা মামলা দিয়ে, ভয় ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের দলের নিচুতলায় কর্মীদের ওদের দলে টানছে। এসব করে ওদের কোনও লাভ হবে না। কারণ জনগণ বিজেপির পাশে আছে। তাই তো এবারের বিধানসভা ভোটে জেলার আমরা পাঁচ আর ওরা শূন্য। বিজেপি নেতৃত্ব যাই বলুক না কেন তাদের পঞ্চায়েত সদস্য, মণ্ডল ও বুথ স্তরের পদাধিকারীদের যোগদানের ফলে জেলায় তৃণমূলের শক্তি বাড়ছে। ইতিমধ্যেই মাদারিহাটের শিশুঝুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বীরপাড়া চা বাগানের সাড়ে ৫০০ বিজেপি পরিবার সহ ওই বাগানে বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা পরমেশ্বর ওঁরাওকে দলে নিয়ে তৃণমূল মাদারিহাটে বিজেপিকে জোর ধাক্কা দিয়েছে। 
কালচিনি ব্লকেও বিজেপিতে ভাঙন চলছে। রাজাভাতখাওয়া পঞ্চায়েতের তিন বিজেপি সদস্য সহ ওই দলের মণ্ডল সভাপতি বিজয় তিনচিনা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কালচিনিতে সাবেক জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের প্রাক্তন আরএসপি সদস্য রামকুমার লামাও তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। 
কালচিনিতে বনজন শ্রমজীবী মঞ্চের জেলা আহ্বায়ক লালসিং ভুজেল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বনবস্তি এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন বাড়ছে। আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের শামুকতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস ও বিজেপির একজন করে সদস্য সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেন। রাজাভাতখাওয়া পঞ্চায়েতের দু‌ই কংগ্রেস সদস্য আজ, রবিবার তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন।