সংবাদদাতা, ইসলামপুর: প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই জনজোয়ার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায়। সোমবার উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়ার শিরশি মাদ্রাসা ময়দান, হেমতাবাদের মহারাজা ও কালিয়াগঞ্জের চান্দোল মাঠে তৃণমূল সুপ্রিমো নির্বাচনী জনসভা করেন। তার এই কর্মসূচি ২০ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশনের নির্দেশে প্রচার শেষের দিন এগিয়ে আসায় একদিন আগেই জনসভা করতে হল তৃণমূলকে। মানুষের মধ্যে তৃণমূল সুপ্রিমোকে দেখা এবং তাঁর কথা শোনার জন্য উৎসাহ, উদ্দীপনা ছিল তুঙ্গে। অথচ কোভিড পরিস্থিতির কথা ভেবে তৃণমূল নেত্রী তাঁর ভাষণ দীর্ঘ করেননি। রাজ্য তথা দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও উদ্বিগ্ন। তাই তড়িঘড়ি তিনটি জনসভা শেষ করে তিনি চলে যান মালদহে। আগামীকাল বুধবার বালুরঘাট ও হরিরামপুরে জনসভা করবেন তিনি।  
সোমবার উত্তর দিনাজপুরে ভোটের প্রচারে এসে তিনি কোভিডকে গুরুত্ব দেন। ২২ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরের ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট। তাই প্রচারের শেষ দিনে উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়া, হেমতাবাদ ও কালিয়াগঞ্জে তাঁর সভা ঘিরে মানুষরে উচ্ছ্বাস ছিল চরমে। দিন কয়েক আগেও এ ধরনের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্তত ৪০-৪৫ মিনিট বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছে। এদিন মাত্র ১২ মিনিট ভাষণ দেন চাকুলিয়ায়। হেমতাবাদে মিনিট কুড়ি বক্তৃতা দেওয়ার পরই ইতি টানেন সভার। বলেও দেন, কোভিডের সময় আপনারা সকলেই মাস্ক পরবেন, প্রচারে, সভায় গেলেও। প্রতিটি জনসভাতেই দেখা যায়, সামনের দিকে অনেকেই মাস্ক পরে সভাস্থলে হাজির হয়েছেন। তা লক্ষ্য করে দলনেত্রী বলেন, কোভিড চলছে। বেশি কথা বলব না। আপনারা সাবধানে থাকুন, সুস্থ থাকুন।   
এদিন সকাল থেকেই জেলাজুড়ে তৃণমূলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যস্ততা ছিল। চাকুলিয়ায় সকাল ৯টা থেকেই বিভিন্ন এলাকার মানুষ টোটো করে আসতে থাকে। ১০টা বাজতেই সভাস্থল প্রায় ভর্তি হয়ে যায়। মাঠ ছেড়ে ভিড় গিয়ে পৌঁছয় রাস্তাতেও। চলাচলের জন্য তিলধারণের জায়গা ছিল না। ভিড়ের কারণে চেয়ার সরিয়ে মাটিতেই অনেকে বসে পড়েন।   নেত্রীর হেলিকপ্টারের শব্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। চাকুলিয়ায় দলের প্রার্থী মিনহাজ আরফিন আজাদ ছাড়াও চোপড়ার প্রার্থী হামিদুল রহমান ও ইসলামপুরের প্রার্থী আবদুল করিম চৌধুরী এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন। 
হেমতাবাদ ও কালিয়াগঞ্জের সভাতেও ছিল জনজোয়ার। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এত জনসমাগমের কারণ মানুষ বিজেপিকে বিদায় দিতে চাইছে। হেমতাবাদের সভামঞ্চে স্থানীয় প্রার্থী সত্যজিৎ বর্মন, রায়গঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল, ইটাহারের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও করণদিঘির প্রার্থী গৌতম পাল ছিলেন। কালিয়াগঞ্জে ছিলেন দলীয় প্রার্থী তপনদেব সিংহ। 
প্রতিটি সভা মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রীতির বার্তা দেন। তৃণমূল নেত্রী বলেন, রমজান মাস চলছে। আপনাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। অন্নপূর্ণা পুজো আছে, রাম নবমীও চলছে। সব উৎসব পালন করতে হবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ করবেন না। কোনও অশান্তি করা যাবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিন। যেভাবে ওরা গুলি চালিয়েছে শীতলকুচিতে।  সেই বুলেটের জবাব ব্যালটে চাই। 
তিনটি জনসভা করেই মালদহে চলে যান তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন সেখানেই থাকবেন। দলীয় সূত্রের খবর, আজ মঙ্গলবার ভোটের প্রচারে তিনি মুর্শিদাবাদে যাবেন। সেখানে প্রচার সেরে ফের মালদহে ফিরে আসবেন মমতা। মঙ্গলবারও মালদহেই রাত্রিবাস করবেন। বুধবার তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরে বালুরঘাট ও হরিরামপুরে দু’টি সভা করবেন।