বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
চা বাগান ঘেরা ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা আসনটি গত ১০ বছর ধরে কংগ্রেসের দখলে। ২০১৬ সালের ভোটে এখানে বিজেপি তৃতীয়স্থানে ছিল। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা এলাকায় বিজেপি প্রার্থী প্রায় ৫০ হাজার ভোটে লিড পেয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে মোদি হাওয়াকে হাতিয়ার করে বিজেপি এবার এই আসনটি জয়ের স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন ধাক্কা খাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পের সাফল্যের কাছে। আর এখানেই প্রচারে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী ছোটন কিস্কু, বলছেন এলাকার বাসিন্দারাই।
ফাঁসিদেওয়া ও খড়িবাড়ি ব্লক নিয়ে এই আসনটি তফশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। শিলিগুড়ি শহরের কাছে ফাঁসিদেওয়ার গা ঘেঁষে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। আর একপ্রান্তে খড়িবাড়ি, প্রতিবেশী রাজ্য বিহার সীমানার কাছাকাছি। সংখ্যালঘু ভোট তুলনায় বেশি হলেও রাজবংশী ভোটও এখানে ফ্যাক্টর। মিশ্র ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের বাস এই কৃষিপ্রধান এলাকায়। কিন্তু ভোটের ময়দানে জাতপাতের ভেদাভেদ নিয়ে আস্ফালন উদ্বেগ বাড়িয়েছে এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের। চটহাট থেকে ঘোষপুকুর,বিধাননগর থেকে বিন্নাবাড়ি ঘুরলেই সেই আশঙ্কার কথা কানে আসছে।
জোড়া ফুল ছেড়ে পদ্ম হাতে তুলে নিয়েছেন দুর্গা মুর্মু। প্রচারে বেড়িয়ে ভোটারদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাই বিজেপি প্রার্থীকে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে। তবে ঘনঘন দলবদলে তাঁর যথেষ্ট ‘সুখ্যাতি’ও আছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তিনি। গেরুয়া শিবির তাঁকে প্রার্থীও করেছিল। কিন্তু ভোট পর্ব সাঙ্গ হতেই তাঁর রাজনৈতিক ঠিকানা হল তৃণমূল কংগ্রেস। গত লোকসভা নির্বাচনের পর ফের তিনি বিজেপিতে ফিরে যান। বারবার দল বদলানোয় এই প্রার্থীকে নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে । তা অবশ্য মানতে নারাজ দুর্গা।
কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল তিরকি এখানকার বিধায়ক। যদিও এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সবসময় তাঁকে পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল প্রার্থী ছোটন কিস্কু প্রচারে বেশি সাড়া পাচ্ছেন। বিক্ষিপ্ত কিছু জায়গা ছাড়া মোটামুটি সব এলাকায় তৃণমূলের পতাকা, দেওয়াল লিখন, ব্যানার বেশি করে চোখে পড়ছে।
ছোটন কিস্কু এলাকার পরিচিত মুখ। তিনিও দলবদলু। এই আসনে ২০০৬ সালে সিপিএমের টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, সহসভাধিপতি পর্যন্ত হয়েছিলেন। মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বহুদিনের। কিন্তু ভোটের প্রচারে তাঁকে এগিয়ে রেখেছে মুখ্যমন্ত্রীর ‘চা সুন্দরী প্রকল্প’। বললেন, এই এলাকাটি চা বাগান ঘেরা। বহু মানুষ চা বাগানে কাজ করে পেটের ভাত জোগাড় করেন। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্পের জনপ্রিয়তার সুফল পাচ্ছি প্রচারে। ছোটনের দাবি, চা সুন্দরী প্রকল্পে চা শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। ফাঁসিদেওয়ার কমলা চা বাগানে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আবাসন তৈরির কাজ দেখে এখানকার চা শ্রমিকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই ২০২ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। গত ১০ বছরে রাস্তাঘাট থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী সহ ৬৪টি প্রকল্পের সুফল মিলেছে। দুয়ারে সরকার পেয়ে গ্রামের মানুষ খুশি। সেখানে এবার বিজেপি প্রার্থীকে প্রচারে গিয়ে শুনতে হচ্ছে, বাসিন্দাদের আতঙ্ক আর উদ্বেগের সঙ্গে রান্নার গ্যাস, পেট্রল-ডিজেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ল কেন? এরকম বেশকিছু অপ্রিয় প্রশ্ন। যদিও এসবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না দুর্গা মুর্মু। তাঁর দাবি, এসব ঠিক নয়, সর্বত্রই মোদি হাওয়া। মানুষ বিজেপিকে চাইছে। আমিই জিতব।
হ্যাটট্রিকের আশায় কংগ্রেস প্রার্থী এবং বর্তমান বিধায়ক সুনীল তিরকিও। তাঁর দাবি,এই অঞ্চলের মানুষ বরাবরই কংগ্রেসের সঙ্গে আছেন। রয়েছে বামফ্রন্টের সমর্থনও। তাই এবার আমার জয় সময়ের অপেক্ষা।