বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় শিলিগুড়ি ‘লালদ্বীপ’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই দ্বীপে থাবা বসায় বিজেপি। সেবার সিপিএমের ভোট ৪৬.৩৬ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়ায় ৮.২১ শতাংশের আশপাশে। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, বামফ্রন্টের ভোটেই এখানে ‘হৃষ্টপুষ্ট’ হয়েছে গেরুয়া শিবির। রামে যাওয়া সেই বাম ভোট এবার নির্বাচনে নিজেদের ঝুলিতে নিয়ে আসাই বড় চ্যালেঞ্জ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর কাছে। তাই বয়সের তোয়াক্কা না করে ময়দানে নেমে পড়েছেন তিনি। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন। জনসংযোগ বাড়াতে বুথে বুথে গিয়ে ঝাণ্ডা লাগিয়েছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মিটিংও করছেন। এখন নির্বাচনী পার্টি অফিস চালু করার পাশাপাশি দেওয়াল দখল শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ৫০টির বেশি এমন অফিস খুলেছেন।
বামফ্রন্টের একাংশের বক্তব্য, অশোকবাবু এই শহর তো বটেই উত্তরবঙ্গের বাম রাজনীতিতে অন্যতম মুখ। তিনি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য। কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি কৌশলে পুরসভা পরিচালনা করছেন। বিধায়ক কোটার টাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অর্থাৎ মসৃণ নয়, কাঁটা বিছানো পথ দিয়ে চলতে হয়েছে তাঁকে। অশোকবাবু অবশ্য বলেন, লোকসভার সঙ্গে এই ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। এবার এখানে ফল ভালো হবে। অনেক অরাজনৈতি নাগরিক, বিশেষ করে মহিলা ও যুবকরা আমাদের সঙ্গে এসেছেন।
কিন্তু রামে যাওয়া বাম ভোট উদ্ধার হবে? এ নিয়ে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে এখানে বামফ্রন্ট ১৪ শতাংশ ভোট পায়। কয়েক মাস পর ২০১৫ সালে পুর নির্বাচনে এখানে বামফ্রন্টের ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশ। তার কয়েক মাস পর বিধানসভা ভোটে সেই ভোট বেড়ে হয় ৪৬ শতাংশ। বরাবরই এখানে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে এমন ফারাক থাকে। লোকসভাতে কম পেলেও বিধানসভায় আমরা প্রচুর ভোট পাই। এবার আরও বেশি ভোট পাব।
বামফ্রন্ট নেতারা যাই বলুন না কেন, ভোটের গ্রাফ ওঠা-নামার অঙ্ক কষেই ময়দানে ঘুঁটি সাজিয়েছে তৃণমূল। এখানে প্রার্থী করা হয়েছে অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রকে। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) রঞ্জন সরকার শহর চষে বেড়াচ্ছেন। দলের অন্যান্য নেতারাও ময়দানে মাটি কামড়ে আছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট ছিল ৩৮.০১ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় তা কমে দাঁড়ায় ২৩.৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের তুলনায় তাদের লোকসান কম হয়েছে। তাই রামে যাওয়া বাম ভোট স্যুইং করাতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) বলেন, করোনাকালে নাগরিকদের পাশে কেউ ছিল না, আমরাই ছিলাম। এখনও সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে আমরাই আছি। তাই এই কেন্দ্র এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দেবই।
তবে আপাত দৃষ্টিতে শহরে পদ্ম শিবিরের কর্মসূচি নজরে না পড়লেও তারা ‘দলবদলুদের’ নিয়ে শক্তি বাড়াতে মরিয়া চেষ্টা করছে। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল বলেন, নির্বাচনী কার্যালয় খোলা ও দেওয়াল দখলের পাশাপাশি যোগদান শিবির চলছে। এখানে আমাদের ফল লোকসভার থেকেও ভালো হবে। উল্লেখ্য, গত লোকসভায় তাদের ভোট ১১.৪৬ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬২.১২ শতাংশে।