নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, মালদহ: পাঁচবার যে আসন থেকে লড়াই করেছেন তিনি, সেই ইংলিশবাজার আসনেই এবার লড়ছেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। আর ইংলিশবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষকে সরানো হয়েছে চাঁচল কেন্দ্রে। আর বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন উজ্জ্বল চৌধুরী। হাতেনাতে ‘পুরষ্কার’ মিলল ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। মালদহ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিট পেলেন তিনি। 
মালদহ জেলার মোট ১২টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে তৃণমূল। হবিবপুর, গাজোল, মালদহ ও বৈষ্ণবনগর আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে যথাক্রমে সরলা মুর্মু, বাসন্তী বর্মন, উজ্জ্বল চৌধুরী ও চন্দনা সরকারকে। সুজাপুর আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে মহম্মদ আবদুল গণিকে। এজেলায় তিনি নতুন হলেও বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তিনি অপরিচিত কোনও মুখ নন। গণি সাহেব বর্তমানে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে তৃণমূলেরই বিধায়ক। সেইসঙ্গে তিনি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানও।
তবে গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী যাঁরা হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই এবার টিকিট পাননি। এই টিকিট না পাওয়াদের তালিকায় রয়েছে জেলার প্রাক্তন সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, কো অর্ডিনেটর দুলাল সরকার, সুশীল রায়ের মতো হেভিওয়েটদের নামও। প্রার্থীতালিকায় নেই গতবারের চাঁচলের প্রার্থী সৌমিত্র রায়ের নামও। দলের জেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ইংলিশবাজার আসনে এর আগে পাঁচবার লড়াই করেছেন। একটি উপনির্বাচন সহ তিনবার জিতেছেন। দু’বার হেরেওছেন। দল তাঁকে আবার প্রার্থী করার পর কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, আমার উপরে দল আস্থা রাখায় আমি কৃতজ্ঞ। আমার বিশ্বাস এই কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হবে।
এদিকে, চাঁচলে লড়াই করবেন ইংলিশবাজারের বর্তমান বিধায়ক তথা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন নীহাররঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, দলনেত্রী নিজে ভবানীপুর কেন্দ্র ছেড়ে নন্দীগ্রামে লড়াই করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। একইভাবে আমাকেও তিনি নতুন আসনে লড়াই করতে পাঠিয়েছেন। তাঁর সম্মান রক্ষা করার চেষ্টা করব। 
মোথাবাড়ি ও রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে ২০১৬ সালে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে পরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া দুই বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন ও সমর মুখোপাধ্যায়কে। মানিকচক কেন্দ্রে প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর উপরেই আস্থা রেখেছে তৃণমূল। এই আসনে ২০১১ সালে জিতে মালদহের প্রথম তৃণমূল বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য তিনি হেরে যান। 
বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপি নেতা ও মালদহ জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী। তফশিলি জাতিভুক্তের জন্য সংরক্ষিত মালদহ আসনে তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে। জেলা পরিষদের আরেক প্রাক্তন সভাধিপতি ও বর্তমানে মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সরলা মুর্মুকে তফশিলি উপজাতিভুক্তের জন্য সংরক্ষিত আসন হবিবপুরে প্রার্থী করেছে দল। তফশিলি জাতিভুক্তের জন্য সংরক্ষিত গাজোল কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন নবাগতা বাসন্তী বর্মন। তিনি পেশায় একটি হাই স্কুলের শিক্ষিকা।
মালতিপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি। হরিশ্চন্দ্রপুরে তৃণমুল প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন ফরোয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তাজমুল হোসেন। 
সব মিলিয়ে মালদহের তৃণমূল প্রার্থী তালিকায় মহিলা প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৪১ শতাংশ। সংখ্যালঘু প্রার্থী রয়েছেন চারজন। শতাংশের হিসাবে প্রায় ২৫ শতাংশ। 
প্রার্থী তালিকায় স্থান না পেলেও মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এর থেকে ভালো প্রার্থীতালিকা আর হতে পারে না। জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, প্রার্থী তালিকায় কাজের লোকেদেরই জায়গা দিয়েছেন। দলের কো অর্ডিনেটর দুলাল সরকার বর্তমানে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। তিনিও বলেন, অত্যন্ত ব্যালান্সড প্রার্থীতালিকা তৈরি করেছে দল। দলের কর্মীরা দারুণ খুশি।