গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
আমন ধান পাকার পর, ধান কেটে বাড়ি নিয়ে গিয়ে গোলা ভরেছেন কৃষকরা। সেই ধান থেকেই জোটে পরিবারের সারা বছরের খোরাকি। বছরভর খাওয়ার চাল রাখার কাজটাই করা হয় সবার আগে। তারপর রয়েছে রবিশস্য চাষের জন্য খরচ তোলা। আমন ধান বাজারে বিক্রি করেই রবিশস্য চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার প্রভৃতির খরচ তোলেন অনেক কৃষক। তারপরেও যে বাড়তি ধান থেকে যায় গোলায়, গ্রামের গৃহিণীরা আজও সেই ধানের পরিবর্তেই নেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আর গ্রামীণ এলাকার ফেরিওয়ালারাও সেটা জানেন ভালো করেই। তাই আমন ধান ঘরে ওঠার কিছুদিন পর তাঁরাও বদলে ফেলেন ব্যবসার কায়দা। জেলাজুড়েই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ফেরিওয়ালারা হাজির হয়ে যান পসরা সাজিয়ে। টাকার বদলে ঝোলায় ভরে নেন ধান। শুধুমাত্র গরম জিলিপি বা শীতের জামাকাপড় নয়, অনেকেই আবার থালাবাসনও বিক্রি করেন ধানের পরিবর্তেই। বংশীহারি গাঙ্গুরিয়া এলাকার কৃষক নিমাই দাস বলেন, আমন ধান উঠেছে। ফসলের দাম খুব একটা ভালো মিলছে না। সব ধান একসঙ্গে বিক্রি করলে লোকসান হবে। তাই কিছু ধান বিক্রি করে রবিশস্য চাষ করছি। আর বাড়িতে যে বাড়তি আমন ধান রয়ে গিয়েছে, তা দিয়ে বাড়ির লোকজন গ্রামের ফেরিওয়ালাদের থেকে জিনিসপত্র নেয়। সংসারের অন্যান্য খরচও আমরা ধান দিয়ে মেটাচ্ছি। বছরভর বাড়ির পুজোআচ্চা করেন যে পুরোহিত, তাঁকে টাকার বদলে ধান দিয়ে দিয়েছি বছরের শেষেই। বাড়ির বাচ্চাকে যে শিক্ষক পড়ান, তাঁর মাইনেও অনেকেই ধান দিয়ে মিটিয়ে দেন। শীতকাল ছাড়া অন্য সময়েও ফেরিওয়ালাদের থেকে ধারে জিনিস কিনি। আমন ধান উঠলে তা দিয়ে দাম দিয়ে দিই। ফেরিওয়ালারা এখন গ্রামে আসছেন নানা ধরনের খাবার নিয়ে। জিলিপি, মিষ্টি বিক্রি করছেন। ছোটরা বায়না মেটাতে অনেকসময় ধান দিয়ে মিষ্টি কিনে দেন বাড়ির মহিলারা।
এভাবেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে জিলিপি বিক্রি করেন রঞ্জিত সাহা। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন ব্লকে ঘুরে জিলিপি বিক্রি করি ধানের পরিবর্তে। নগদ টাকা পেলেও তা দিয়ে চাল তো কিনতেই হতো। এই ধান দিয়ে আমার বছরের চালের খরচটা উঠে যায়। বাকি ধান বিক্রি করে দিই। গ্রামের মানুষও টাকার বদলে এই সময়টায় ধান দিতেই স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জিনিস বিক্রি করে বিনিময়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কেজি ধান পেয়ে থাকি। আমাদেরও সুবিধা হয়, গ্রামের মানুষকেও নগদ দিতে হয় না। গঙ্গারামপুরের একটি গ্রামের ক্লাস থ্রি’র ছাত্রকে পড়ান এক গৃহশিক্ষক। কিছুদিন আগেই তাঁর হাতে বছরের বেতন হিসেবে তিন মণ ধান তুলে দিয়েছেন ছাত্রের বাবা। ফাইল চিত্র