দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
১৯২৮ সালের ২৬ মে সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন তৎকালীন দিনাজপুর জেলায়। তিনি প্রথমে হিলিতে আসেন। সেখান থেকে বালুরঘাটে এসে জেলা কংগ্রেসের পার্টি অফিসের উদ্বোধন করেন। কিন্তু সেই পার্টি অফিস আজ আর নেই। ভাঙনের ফলে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে সেই ভবন আত্রেয়ীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। সেসময় বালুরঘাটের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিন ভাই সুরেশরঞ্জন, সুশীলরঞ্জন ও সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। শহরের কংগ্রেসপাড়ায় তাঁদের বাড়িতেই রাত্রিবাস করেন নেতাজি। নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়িটিও রক্ষা করা যায়নি। বছর দশেক আগে সেই বাড়ির একটি অংশ ভেঙে তৈরি হয়েছে বহুতল। বাড়ির বাকি অংশটি সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বংশধররা।
সরোজরঞ্জনবাবুর নাতির স্ত্রী দুর্গা চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রায় দশ বছর আগে বাড়ির একটি অংশ বিক্রি হয়ে যায়। সেই সময় আমি নেতাজির স্মৃতি রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল এবং জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। তারপরও বাড়িটির অংশবিশেষ রক্ষা করা যায়নি। আমরা এখানেই থাকি। এখন বাড়ির যে অংশটুকু রয়েছে, সেটা রক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি। তাহলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে নেতাজির স্মৃতির কথা। বালুরঘাট কেন্দ্রের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব।
বালুরঘাটের ইতিহাস গবেষক সমিত দাস বলেন, বালুরঘাটে এসে নেতাজি একাধিক সভা ও কর্মসূচি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে একটি মূর্তি ছাড়া শহরে আর কোনও স্মারক নেই। তাই নেতাজি যে জায়গাগুলিতে গিয়েছিলেন, বা যেখানে কর্মসূচি করেছিলেন, সেই জায়গাগুলি সংরক্ষণ করা হলে ভালো হয়। একই দাবি তুলেছেন হিলির বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক হিমাংশু সরকার। তিনি বলেন, নেতাজির অনেক স্মৃতি থাকলেও কোনও স্মৃতিসৌধ নেই। নেতাজি যে এখানে এসেছিলেন, তা জেলাবাসীকে জানাতে হিলি বা বালুরঘাটে স্মৃতি সৌধ বানালে ভালো হয়।
বালুরঘাট পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান হরিপদ সাহা বলেন, আমাদের শহরে নেতাজির মূর্তি রয়েছে। তবে বালুরঘাটে তাঁর পদার্পণের স্মৃতি ধরে রাখার মতো স্মারক বা সৌধ নেই। এব্যাপারে কিছু করা যায় কি না, দেখছি।
জেলায় এসে নেতাজি হিলির কংগ্রেস নেতা প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর হিলির তৎকালীন জমিদার কুমুদনাথ দাসের কাছারি বাড়িতে ওঠেন। সেই সময়কার স্থানীয় কংগ্রেস নেতা নিশীথনাথ কুণ্ডু, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার সহ একাধিক নেতৃত্ব নেতাজিকে হিলির বারোয়ারিতলায় নাগরিক সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সেসময় ওই এলাকার একাধিক জায়গায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। সেসব জায়গায় গিয়েছিলেন নেতাজি। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁর পরিদর্শনের পর ব্রিটিশ সরকার দুর্ভিক্ষগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণ পাঠাতে বাধ্য হয়। বালুরঘাটের আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি গবেষক কৌশিক বিশ্বাস বলেন, হিলিতে যে সভা হয়েছিল, সেখান থেকে প্রথম বেঙ্গল ভলান্টিয়ার গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। নিজস্ব চিত্র