গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ভিসা-পাসপোর্টের গেরোয় কাছের মানুষরা বড় দূরের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছেন। এক বছর পর, কাঁটাতারের আড়াল থেকে নিজের আত্মীয় পরিজনদের চোখের দেখা দেখে রবিবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন ভারত-বাংলাদেশের বহু বাসিন্দাই। প্রতি বছরই বালুরঘাট ব্লকের জলঘর গ্রাম পঞ্চায়েতের ত্রিকূল এলাকায় পীরবাবার মেলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের বাসিন্দাদের মিলন উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়। এদিন সেখানে এক বছর পর নিজের পরিজনদের দেখতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার ভাই, বোন, কাকা, মামাদের খাওয়ার জিনিস, বস্ত্র সহ নানান সামগ্রী কাঁটাতার টপকে ছুঁড়ে দিতেও দেখা গেল অনেককেই।
এই মেলাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় দুই বাংলার বাসিন্দারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। বিএফএফের তরফেও দুই দেশের মানুষকে একে অপরের সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ দেওয়া হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিন মেলায় দেখা গেল কাঁটাতারের দুই পাশে প্রায় কুড়ি হাজার বাসিন্দা নিজের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে জড়ো হয়েছেন।
আমিনা বিবির মতোই মালতী রায়, চঞ্চল বর্মন, রফিকুলের মতো এই দেশের বহু বাসিন্দা এদিন সকাল থেকে অপেক্ষা করেছিলেন কাঁটাতার ঘেঁষা এলাকায়। ওপারে থাকা তাঁদের কাকা, মামা, ভাই, ভাইপোদের সঙ্গে দেখা করার জন্য হাঁকপাক করছিলেন। পরিজনদের দেওয়ার জন্য অনেকেই নিয়ে এসেছিলেন নানারকম উপহারও। কেউ এনেছিলেন জিলিপি, পিঠে বা অন্য কোনও খাদ্য। কেউ আবার জামাকাপড়। ওপারে যাওয়া তো মানা। তাই কাঁটাতারের এপার থেকেই সেসব ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেন তাঁরা। একইরকমভাবে প্রিয়জনের গন্ধমাখা উপহার কাঁটাতার টপকে এসেছে এপারেও। এসেছে বাংলাদেশের গুড়। এসেছে বাড়িতে রান্না করা পায়েস। লুঙ্গি।
জলঘরের আমিনা বিবি বলেন, আমার ভাইকে অনেকদিন দেখিনি। পাসপোর্ট করে বাংলাদেশে যাওয়া হয় না। বাংলাদেশে থাকা ভাই সহ অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ বছরে এই একবারই আসে। তাই এদিন ভাইকে দেখতে এসেছিলাম। এখন খুব ভালো লাগছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বাসিন্দা আমিনার ভাই নূর মহম্মদ বলেন, দিদিকে দেখতে পেয়ে আমি খুব খুশি।
তপন থানা এলাকার বাসিন্দা সিরাজ রহমান বলেন, দীর্ঘ এক বছর পর মামার সঙ্গে দেখা হল। প্রতি বছর এই দিনটির জন্য আমি ও আমার পরিবার অপেক্ষায় থাকি। প্রসঙ্গত, পীরবাবার ওই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বাংলাদেশের মহেশপুর, কাঠিপাড়া, নওপাড়া, তালান্ডা এবং ভারতের জলঘর, গোবিন্দপুর, ত্রিকূল সহ বালুরঘাট ও তপনের হাজার হাজার মানুষ একত্র হন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।