সুব্রত ধর  শিলিগুড়ি: গৌতম দেব ও অশোক ভট্টাচার্যের দখলে থাকা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হতে আবেদনের হিড়িক বিজেপিতে। দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দু’টি কেন্দ্র থেকে বিজেপিতে জীবনপঞ্জি জমা পড়েছে প্রায় ৩৫টি। এই তালিকায় শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক ও আইনজীবী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। এমন আবেদনের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে তাঁরা ভাবিত নন।
বিধানসভা ভোটে ‘লালদ্বীপ’ শিলিগুড়িতে পদ্ম ফুল ফোটানোই অন্যতম টার্গেট বিজেপির। দলীয় সূত্রের খবর, গত লোকসভা ভোটে এখানে বামফ্রন্টের ভোট ৭৮ হাজার ৫৪ থেকে নেমে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৯০১। এখানে তাদের স্থান হয় তৃতীয়। অপরদিকে বিজেপির ভোট ১৯ হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৫ হাজার ১৪৮। বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভোট ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি। এজন্য তারা প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দলের জেলা কমিটির কাছে শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য ২০টি আবেদন জমা পড়েছে। এই তালিকায় বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও আইনজীবী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। এলাকায় তাঁদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল বলেন, এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য আরও আবেদন পড়বে। এছাড়া দলের রাজ্য কমিটির কাছেও কিছু আবেদন পড়েছে বলে শুনেছি। তবে এই কেন্দ্র এবার বামফ্রন্টের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবই।          
প্রসঙ্গত, পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে ১ থেকে ৩০ এবং ৪৫ থেকে ৪৭ এই ৩৩টি ওয়ার্ড। ১৯৯১ সাল থেকে পরপর চারবার বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন অশোক। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র হাতছাড়া হলেও ২০১৬ সালে ফের তা কব্জা করেন অশোক। বর্তমানে তিনি শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যানও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা স্থানীয় বিধায়ক অবশ্য বলেন, বিজেপি এখানে অধ্যাপক, আইনজীবী, চিকিৎসক যাঁকেই প্রার্থী করুক না কেন, তা আমাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়। এখানে আমরা জয়ের জন্য লড়াই করছি। শুধু শিলিগুড়ি নয়, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রও টার্গেট করেছে পদ্ম শিবির। বর্তমানে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব এই কেন্দ্রের বিধায়ক। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত লোকসভা ভোটে এখানে পদ্ম শিবির প্রায় ৮৬ হাজার ভোটের লিড পায়। এতেই উচ্ছ্বসিত পদ্ম শিবির কেন্দ্রটি কব্জা করতে জোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে তারা জীবনপঞ্জি সংগ্রহ করেছে। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি বলেন, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হওয়ার জন্য ১৫টি আবেদন এসেছে। এটা আরও বাড়বে। তবে, প্রার্থী যেই হোক, এবার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করবই।
রাজগঞ্জ ব্লকের অন্তগর্ত ডাবগ্রাম-১ ও ২, ফুলবাড়ি-১ ও ২ এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং শিলিগুড়ি পুরসভার ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত। পর্যটনমন্ত্রী অবশ্য বলেন, আর ৪০ হাজার, ৫০ হাজার ভোটে জিততে মজা লাগে না। বিজেপি একটু কড়া প্রার্থী দিক। তা হলে লড়াই করে মজা পাব। আমি খেলার মাঠের লোক। ডার্বি দেখতে চাই। ওসব পাঁচ, ছয় গোলের খেলা ভালো লাগে না।
এর বাইরে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্র থেকেও প্রার্থীর বায়োডাটা সংগ্রহ করছে গেরুয়া শিবির। দলীয় সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট দু’টি কেন্দ্র থেকে এখনও পর্যন্ত ৪৫টি আবেদন জমা পড়েছে।