পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
পুজোর পর বাতাসে শীতের পরশ এসে গিয়েছে। অথচ এখনও পর্যটকদের আনাগোনা সেভাবে শুরুই হল না কুলিক পাখিরালয়ে। অথচ, অনেক পাখি এসেছে এবার। তা সত্ত্বেও পর্যটকদের এহেন অনীহা কেন? এপ্রশ্নের উত্তরে কোভিড পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন বনকর্তারা।
জানা গিয়েছে, শীত পড়তে না পড়তেই, প্রতি বছর কুলিকে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে সমস্তটাই বদলে গিয়েছে। ছুটির আমেজে ভিড় বাড়ছে না কুলিকে। যা যথেষ্টই চিন্তার কারণ বনদপ্তরের কাছে। কুলিক পাখিরালয়ে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু অন্যবারের মতো এবছর একেবারেই সেই ছবি দেখা যাচ্ছে না। এমনকী শনি-রবিবারেও তেমন ভিড় নেই। বনদপ্তরের রায়গঞ্জের বিট অফিসার বরুণকুমার সাহা বলেন, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী আমরা স্যানিটাইজেশন ও থার্মাল চেকিং করে পর্যটকদের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি। ভিতরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। গত ২ অক্টোবর সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী কুলিক পাখিরালয়ের গেট পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কোভিডের যাবতীয় প্রোটোকল মানা হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে না। এখানে পরিযায়ী পাখি ও দেশি পাখি ছাড়াও নীলগাই, উট, বানর, বিভিন্নপ্রকার পাখি, দেশি বিদেশি মাছ রয়েছে। পর্যটকরা এলে ভালো লাগে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছর অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ১০০ জন করে পর্যটক আসেন কুলিকে। অথচ, এবছর গড় দৈনিক পর্যটকের সংখ্যা ৩০ জন। অর্ধেকেরও কম। পর্যটকরা কম আসায় উপার্জন মার খাচ্ছে কুলিকের উপর নির্ভর করে থাকা স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও। এলাকারই এক হোটেল ব্যবসায়ী প্রদীপ পাল বলেন, শীতকালে আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। বিশেষ করে শনি-রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিনে ভালোই ভিড় হয়। কিন্তু এবার একেবারে লোক আসছেই না।
এলাকারই এক গাড়িচালক অমিত দাস বলেন, রায়গঞ্জ থেকে পর্যটকদের কুলিক নিয়ে আসি। এবার ভেবেছিলাম হয়তো ভালোই ভিড় হবে। কিন্তু সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতেও মাছি তাড়াতে হচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরের খুব কাছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শামুকখোল পাখিরালয় কুলিক। প্রতিবছর বর্ষাকালে বিভিন্ন দেশ থেকে শামুকখোল পরিযায়ী পাখিদের কোলাহলে ভরে ওঠে কুলিক পক্ষীনিবাস। এবছরও এখানে রেকর্ড সংখ্যক পরিযায়ী পাখি এসেছে। সাদা শামুকখোল, ইগরেট, নাইট হেরন, করমোরেন্ট পাখির আগমনে সবুজ অরণ্য প্রায় দুধসাদা হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে এই পরিযায়ী পাখিরা এখানে চলে আসে। এরপর জুলাই মাসে তাদের বাসা বানানোর কাজ শুরু হয়। এরপর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বড় করার প্রক্রিয়া চলে।
অন্যদিকে, গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এই পাখিরালয়। বনদপ্তর জানিয়েছে, এবছর পাখির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৬৩১। যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। পাখি গণনার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই দপ্তরের আধিকারিকরা এই সংখ্যাবৃদ্ধির ধারণা করছিলেন। অবশেষে সেই সম্ভাবনাই সত্যি হওয়ায় তাঁরা খুশি। পাশাপাশি ইতিমধ্যে কুলিক পাখিরালয় সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুশি। কিন্তু এই সময় সেইভাবে পর্যটকদের দেখা না পাওয়ায় চিন্তিত বনদপ্তর। কারণ এতে আয় অনেকটাই কমে যাচ্ছে।