কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
সাহেবগঞ্জ জেলার বারহারোয়া থানার গণেশপুর এলাকার শেরাসিং গ্রামের বাসিন্দা মণ্টু শেখ। বছর পাঁচেক আগে ট্রাক কিনেছিলেন তিনি। নিজের ট্রাক নিজেই চালাতেন। মানিকচক ঘাট দিয়ে কখনও পাথরকুচি আবার কখনও বালি নিয়ে এসে পৌঁছে দিতেন মালদহের বিভিন্ন জায়গায়।
মন্টুর দাদা ইসমাইল শেখ বলেন, ঝাড়খণ্ডের উদুয়া থেকে পাথরকুচি নিয়ে আসছিল ভাই। সোমবার সকালে নিজেই ট্রাক চালিয়ে রাজমহল ঘাট থেকে ভেসেলে চেপে মালদহের দিকে রওনা হন মণ্টু। বুধবারই ছিল বিয়ে। বিয়ের দু’দিন আগে মালদহে যেতে না করেছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু মন্টু বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসবেন। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যাতেই পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ভেসেল থেকে গঙ্গায় পড়ে গিয়েছে আটটি ট্রাক। সেগুলির মধ্যে মন্টুর ট্রাকটিও রয়েছে। দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সড়কপথে রওনা হয়ে যান মালদহের উদ্দেশে। রাত ১০.১৫টা নাগাদ পৌঁছে যান মানিকচক ঘাটে। তখন থেকে সেখানে ঠায় বসে রয়েছেন তাঁরা। সারারাত কেটেছে দু’চোখের পাতা এক না করে। সকালে চলে এসেছেন মণ্টু শেখের দুই বোনও।
গাড়িতে বসে মাঝেমধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন গঙ্গায় নিখোঁজ ট্রাকচালক মণ্টু শেখের বড়দি আরবিয়া বিবি। কোনওমতে নিজেকে সামলে তিনি বলেন, বুধবার ভাইয়ের বিয়ে ছিল। পাত্রীর বাড়ি দু’কিলোমিটার দূরের হাসিনপুর গ্রামে। বিয়ের প্রস্তুতি ছিল শেষ পর্যায়ে। আত্মীয়স্বজনরাও সকলে বাড়িতে চলে এসেছেন। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যাতেই দুঃসংবাদ আসে। গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছেন মণ্টু। পাত্রীর বাড়িতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সারাদিন অপেক্ষা করেও বিকেল পর্যন্ত ভাইয়ের খোঁজ পাননি ইসমাইল শেখ, আরবিয়া বিবিরা। স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে গোটা পরিবারকে। মঙ্গলবার সকালে ওই পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি নেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। বিকেলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ভরসা রাখার জন্য অনুরোধ জানান রাজ্যসভার সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর। নেত্রীদের কথায় সাময়িকভাবে আশ্বস্ত হলেও পরিবারটির সদস্যরা বারবার ছুটে যাচ্ছেন পুলিসের কাছে। প্রবল আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইছেন কোনও খবর রয়েছে কি না। কিন্তু আশার কথা শোনাতে পারেননি পুলিস আধিকারিকরাও। ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরেকটি ডুবে যাওয়া লরির সহায়ক ময়না শেখও (৩৫)। তবে তাঁর আত্মীয়স্বজন মানিকচকের উদ্দেশে রওনা দিলেও বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ভেসেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মী তারাচাঁদ যাদবেরও। তাঁরও খোঁজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মানিকচকের ওসি গৌতম চৌধুরী।
এদিকে, দুর্ঘটনার ঘবর পেয়েই সোমবার রাতে, শীত উপেক্ষা করে মানিকচক ঘাটে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিসকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় কৌতূহলী জনতার ভিড় সামাল দিতে। আগাগোড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল সহ একাধিক তৃণমূল ও যুব তৃণমূল নেতারা। মঙ্গলবারও চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল মানিকচক ঘাটে।