গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পুলিস সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, ১৯৩৩ সালের এই দিনে হিলির বীর বিপ্লবীরা দার্জিলিং মেলে ডাকাতি করেছিলেন। সেই দিনটিকে স্মরণ করতেই এদিন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বীর বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা। সেইসঙ্গে আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁদের আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরা।
এদিন ওই অনুষ্ঠানে বিপ্লবী রামকৃষ্ণ সরকারের পুত্র প্রণবকুমার সরকার, কালীপদ সরকারের পুত্র কুমার সরকার এবং কিরণচন্দ্র দে’র পুত্র প্রদীপ কুমার দে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও জেলা পুলিস সুপার দেবর্ষি দত্ত, ডিএসপি হেডকোয়ার্টার ধীমান মিত্র, অতিরিক্ত পুলিস সুপার মহম্মদ নাসিব, ইতিহাসবিদ ও গবেষক সমিত ঘোষ, কৃষ্ণপদ মণ্ডল, হিমাংশু সরকার সহ অন্যান্য বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। সকলেই সেদিনের ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। জেলা পুলিসের এই উদ্যোগকে এদিন সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই। ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ বলেন, হিলির এই মেল ডাকাতির ঘটনা ইতিহাসের এক অন্যতম অধ্যায়। যেখানে এই ঘটনাটি যেখানে ঘটেছিল তা এখন সীমান্তের ওপারে। জেলায় প্রথম পুলিসের উদ্যোগে বিপ্লবীদের স্মরণ করা হল। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
স্বাধীনতা সংগ্রামী রামকৃষ্ণ সরকারের ছেলে প্রণবকুমার সরকার বলেন, পুলিস আমার বাবা এবং তার সহযোগী বিপ্লবীদের স্মরণ করতে এই ধরনের আয়োজন করেছে। দেরিতে হলেও তাতে আমাদের খুব ভালো লাগছে। হিলিতে সেই বিপ্লবীদের স্মরণে একটি স্মৃতি সৌধ গড়ে তোলা হোক।
কি ঘটেছিল ৮৭ বছর আগে? সেসময় দার্জিলিং মেলেই যেত ডাকবিভাগের টাকা। সেই ট্রেন যেত হিলি দিয়েই। সেই ট্রেন লুট করে টাকা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন অনুশীলন সমিতির সদস্যরা। সেই উদ্দেশ্যে ১৯৩৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে হিলি রেল স্টেশনে জড়ো হয়েছিল ১৫ জনের একটি সশস্ত্র বিপ্লবী দল। সেই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী। গভীর রাতে স্টেশনে দার্জিলিং মেল আসার পরেই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা।
সেই সময় উপস্থিত রেলকর্মী ও মালবাহকরা হইচই শুরু করে দেয়। স্টেশনমাস্টার সতীশচন্দ্র দে গুলি চালাতে শুরু করলে বিপ্লবীরাও পাল্টা গুলি চালান। তাতে এক রেলকর্মীর মৃত্যুও হয়। মেলব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বিপ্লবীরা স্টেশন ত্যাগ করেন। সেখান থেকে তিনভাগে ভাগ হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন বিপ্লবীরা। কিন্তু কুমারগঞ্জের সমজিয়া এলাকায় নদী পার হতে গিয়ে ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জনই ধরা পড়ে যান। প্রথমে তাঁদের মধ্যে চারজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বাকিদের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। তাদের হয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই করেন উকিল নিশিথনাথ কুণ্ডু। অবশেষে বিপ্লবীদের ফাঁসির আদেশ রদ করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক হিলি মেল লুট দিবস উদযাপন উপলক্ষে বুধবার হিলিতে পুলিস সুপার সহ অন্যান্য ব্যক্তিরা। -নিজস্ব চিত্র