বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দুর্গাপুজোর মতো উত্তরের ভাণ্ডানী পুজোতেও এবার করোনার করাল ছায়া পড়েছে। অদৃশ্য সংক্রমণ এড়াতে আদালত ও প্রশাসনের নির্দেশে ভাণ্ডানী পুজোর গ্রামীণ মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খিচুরি ও ভোগ বিলির অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়। ডিজে, মাইক বাজানোও বন্ধ ছিল। উত্তরের গ্রামীণ ভাণ্ডানী পুজোতেও ছিল বিষণ্ণতার ছাপ। তবে এ বছরও ভক্তদের মানত করা পাঁঠা, পায়রা বলি হয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, মর্ত্যে পুজো নিয়ে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার সময় জঙ্গলের মধ্যে মা দুর্গার পথ আটকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। রাজবংশীদের দাবি ছিল, দুর্গাকে একদিনের জন্য হলেও তাঁদের পুজো নিতে হবে। রাজবংশীদের বিশ্বাস, মা দুর্গা পুজো নিলে তাঁদের শস্যভাণ্ডার ভরে উঠবে। তাঁদের সন্তান থাকবে দুধেভাতে। সংসার ভরে উঠবে সুখ, সমৃদ্ধিতে। কথিত আছে, এরপরেই মা দুর্গা জঙ্গলে একাদশী তিথিতে একদিনের জন্য মা ভাণ্ডানী নামে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের এই পুজো নেন। জঙ্গলে পূজিতা হয়েছেন বলে কেউ কেউ মা ভাণ্ডানীকে বনদুর্গা বলেও অভিহিত করেন। দুর্গার মতো ভাণ্ডানীরও আছে সিংহ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক ও গণেশ। কিন্তু দুর্গার মতো দশ হাত নেই ভাণ্ডানীদেবীর। এখানে দুর্গা চতুর্ভূজা, তাঁর সঙ্গে অসুর নেই।
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বেশকিছু গ্রামীণ এলাকায় প্রতিবছর ঘটা করে ভাণ্ডানী পুজো হয়। করোনার জন্য সর্বত্র মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল হলেও কোথাও কোথাও প্রতিবছরের মতো এ বছরও মা ভাণ্ডানীকে ভক্তদের মানত করা পায়রা, পাঁঠা বলি দেওয়া হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ এড়িয়ে মঙ্গলবার ঘটা করে ভাণ্ডানীদেবীর পুজো হয় আলিপুরদুয়ারের পূর্ব ভোলারডাবরি, ফালাকাটার বেলতলি, ময়নাগুড়িতে। কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাণ্ডানী গ্রাম, কেদারহাট, মাথাভাঙা শহরের মেলার মাঠ, গোলকগঞ্জ ও মেখলিগঞ্জ মহকুমার রানিরহাটে প্রতিবছরের মতো এবারও পুজো হয়েছে। কিন্তু করোনার জন্য সর্বত্র নিয়মরক্ষারই পুজো করেন উদ্যোক্তারা।
জলপাইগুড়ির ভাণ্ডানী পুজোগুলির মধ্যে প্রাচীনতম হচ্ছে ময়নাগুড়ি ব্লকের মাধবডাঙা ও ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাণ্ডানী গ্রামের পুজো। পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশিকা মেনেই তাঁরা পুজো করলেন।
আলিপুরদুয়ারের পূর্ব ভোলারডাবরি বিএফপি স্কুলের মাঠে এ বছরও ভাণ্ডানী পুজো হয়েছে। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য বীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, করোনার জন্য এবার মায়ের ভোগ, খিচুরি, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব বাতিল করা হয়েছে। তবে এবারও ভক্তদের মানত করা পাঁঠা বলি দেওয়া হয়েছে। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙার ভাণ্ডানী পুজোতেও অনেক ভক্ত মঙ্গলবার সকাল থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পাঁঠা ও পায়রা বলি দেন। নিজস্ব চিত্র