রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর খাদিমপুরে প্রতিবছরই দশমীতে দুর্গার নিরঞ্জনের পরে গভীর রাতে হয় বালাইচণ্ডীর পুজো। এই পুজোকে ঘিরে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যায় প্রতিবছর। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অন্য জায়গায় যখন বিষাদের সুরে সকলের মন ভরে ওঠে, তখন আমরা নতুন করে আনন্দে মেতে উঠি। স্থানীয় বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন বর্মন বলেন, বাবা-ঠাকুরদার মুখে শুনেছি দীর্ঘদিন ধরেই এই পুজো হয়ে আসছে। কিন্তু তা কত বছরের পুরনো, তার হিসেব আমাদের জানা নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, কোনও এক সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। ধীরে ধীরে আয়োজনের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। পরবর্তীতে এই পুজোর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বহু এলাকার মানুষের মধ্যে। এখন তো রায়গঞ্জ শহর ছাড়াও স্থানীয় মিরুয়াল, কানাইপুর, কাশিবাটি, ছত্রপুর, কমলাবাড়ি, হেমতাবাদ, মহারাজাহাট, কসবার মতো জায়গার হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর এখানে এসে ভিড় জমান। এবার অবশ্য করোনার জন্য অন্যান্যবারের তুলনায় ভিড়টা একটু কমই ছিল। এক বছর আগেও এখানে টিনের চালা দেওয়া ছোট মন্দিরে পুজোর আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবছরই আমরা সাত লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি স্থায়ী মন্দির বানিয়েছি। সেখানে পুজো হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে এ বছরের পুজোর আয়োজন অনেকটাই বাহুল্যবর্জিত করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। পুজোর পর সাত দিন ধরে যে বিশাল মেলার আয়োজন করা হতো, তা এবার হচ্ছে না।
দশমীর পরদিন, মঙ্গলবার সকালে খাদিমপুরে দেবী বালাইচণ্ডীর মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল, এলাকার মহিলা ভক্তরা প্রসাদ নিতে এসেছেন। তাঁরা বলেন, সোমবার রাতে পাঁঠা বলি হয়েছে। অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার গ্রামের কোনও বাড়িতে নিরামিষ খাওয়া হবে না। এটাই এখানকার রীতি। এলাকার বর্ষীয়ান বাসিন্দা অর্জুন বর্মন বলেন, এবছর করোনার কারণে চাঁদা তুলতে খুব অসুবিধা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে আর্থিক অনুদান পাওয়া গিয়েছে তা খুব কাজে লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, পুজো হয় একদিনই। দশমীর দিন রাতে। এখানে দেবীর চারটি হাত। অসুর ও মোষের উপস্থিতি নেই। তবে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী সকলেই রয়েছেন। এলাকার প্রায় তিনশো পরিবার এই পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যেকটি পরিবারের পক্ষ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দেওয়া হয়েছে। এবছর প্রায় চল্লিশটি পাঁঠা বলি হয়েছে। এলাকায় সাধারণ মানুষের সুখ-শান্তি ও চাষের জমি শস্যশ্যামলা যাতে হয়, সেই কামনাতেই এই পুজোর আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। বিশ্ববাসী এখন করোনা নিয়ে আতঙ্কিত। সে জন্য এবছর মন্দির প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করা হয়নি। এতে স্থানীয় যুবক-যুবতী ও কচিকাঁচাদের মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই। করোনা সংক্রমণ রুখতে সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে পুজো কমিটির পক্ষ থেকে। বালাইচণ্ডী দেবী। রায়গঞ্জের কমলাবাড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।