গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
দীর্ঘ তিন বছর পর বুধবার গোপন ডেরা থেকে বেরিয়ে আসেন একদা পাহাড়ের ‘দাজু’ (দাদা) বিমল গুরুং। কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে থাকতে চেয়েছেন। শীঘ্রই তিনি দার্জিলিং পাহাড়ে আসবেন বলে জানা গিয়েছে। এ খবর চাউর হতেই পাহাড়বাসী তো বটেই, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এবার বিমলকে যে মেনে নেবেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং গোষ্ঠীর নেতারা। বিনয়বাবু কোনও মন্তব্য না করলেও বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির কাছে পিনটেল ভিলেজে সাংবাদিক সম্মেলন করে জিটিএ’র চেয়ারম্যান অনীত এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিন বছর আগে আন্দোলন ছেড়ে উনি চলে গিয়েছিলেন। আমাদের গোর্খাল্যান্ড বিরোধী বানিয়ে ছিলেন। এরপর অনেক চেষ্টা করে পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত করেছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলেমিশে এখানকার উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাহাড় ছেড়ে যাওয়ার তিন বছর পর রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলেমিশে চলার ব্যাপারে তাঁর উপলব্ধি হয়েছে। তবে উনি পাহাড়ে ফিরতেই পারেন। এনিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিনয় তামাং। তিনিই আমাদের নেতা। তিনিই পার্টি পরিচালনা করবেন। আর আমি জিটিএ’র চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এদিন একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে জিটিএ চেয়ারম্যান আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মতো বিমল গুরুং পাহাড়ে আসতে পারেন। পুরনো চেহারায় তিনি পাহাড়ে কর্তৃত্ব চালানোর চেষ্টা করলে এখানকার মানুষ তা মেনে নেবেন না। শুধু বিনয়পন্থীরা নন, গুরুংয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁর অনুগামীদের একাংশও। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন, পাহাড় ছাড়ার সময় গোর্খাল্যান্ড নিয়ে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিমল। সেই সময় তিনি ‘ভীরুর’ মতো পাহাড় ছেড়েছিলেন। তিনবছর পর বিনয়দের পথেই হাটছেন তিনি। যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন শুরু করে ছিলেন, এখন সেই রাজ্য সরকারের সঙ্গেই বৈঠক করছেন। কেউ আবার বলছেন, পাহাড়বাসীর সঙ্গে তিনি ধোকা দিয়েছেন, চালাকি করছেন।
অন্যদিকে, গুরুংয়ের আবির্ভাব নিয়ে গলা ফাটাতে শুরু করেছে সিপিএমও। এদিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অশোক ভট্টাচার্য বলেন, বিমল গুরুং সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন, তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাই। এর থেকেই স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গুরংয়ের ডিল হয়েছে। এতে পাহাড় ও সমতলের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই ডিল প্রকাশ্যে আনতে হবে। এ ব্যাপারে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন করা হোক। তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পর্যটনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকর ধারণা, গুরুংয়ের সহায়তায় পাহাড়ে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু সেই বিজেপির কাছ থেকে সুবিধা না মেলায় পাহাড়ে রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে গুরুং নয়া অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি বিজেপিকে রুখতে তৃণমূলও কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাজনীতি করতে পারে বলেই মনে হচ্ছে। ফাইল চিত্র