কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
একদম পুজোর সূচনার সময় থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। কাহাররা মূলত শিবিকা বাহক। অর্থাৎ তাঁরা আগে পালকি বহন করতেন। কেন রায়বাড়ির পুজোয় কাহাররা প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেন? কথিত আছে, ওই পুজোয় শুরুতে মা দুর্গা নাকি এসেছিলেন দুলে সম্প্রদায়ের কাঁধে চড়ে। তবে দুলে থেকে কাহার হল কীভাবে? জানা গিয়েছে, বঙ্গে সেন আমলের পূর্বে কাহার সম্প্রদায় সমাজে দুলে বলেই পরিচিত ছিল। বল্লাল সেনের সময়কালে জাতি-শ্রেণী বিভাজনের সময় তাঁদের কাহার বলে উল্লেখ করা হয়। আগে যাঁরা ছিলেন দুলে, সেই সময় থেকে তাঁরাই কাহার বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সেজন্য রায়বাড়িতে সেই নিয়মই আজ পর্যন্ত বহাল রয়ে গিয়েছে।
মালদহের অমৃতি, মথুরাপুর, রতুয়া এইসব অঞ্চলে কাহারদের বসবাস। পালকির চল উঠে যাওয়ায় জীবিকা নির্বাহের জন্য তাঁরা পুরনো পেশা বদলে ফেলেছেন অনেকদিন আগেই। তবে মথুরাপুরের ওই পুজোয় এখনও ডাক পড়ে কাহারদেরই। ষষ্ঠীর দিন প্রতিস্থাপন এবং দশমীতে বিসর্জন—এই কাজের জন্য কিন্তু রায়বাড়ির কাছ থেকে আলাদা করে কোনও পারিশ্রমিক নেন না কাহাররা। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে এপার বাংলায়, মালদহের মানিকচক ব্লকের মথুরাপুরে সপরিবারে চলে এসেছিল ঘোষাল পরিবার। বাংলাদেশের বাড়িতে আগে থেকেই চল ছিল দুর্গাপুজোর। সেই বংশের কমলাকান্ত ঘোষাল পূর্ব বাংলার আদলে মথুরাপুরের বাড়িতেও দুর্গাপুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের থেকে রায়বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই ওই বাড়ি এলাকায় রায়বাড়ি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই কমলাকান্ত ঘোষালের আমল থেকেই কাহাররা এই পুজোর সঙ্গে জড়িত। প্রতিমা প্রতিষ্ঠা ও বিসর্জনের কাজে আর কাউকে অংশই নিতে দেন না কাহাররা। তাঁদের এতটাই আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে। রায়বাড়ির অভিষেক রায় ঘোষাল বলেন, বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই প্রথা। আগে যেভাবে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হতো। সেই নিয়ম নিষ্ঠা এখনও বজায় রাখা হয়েছে। করোনার মধ্যেও বাড়ির পুজোর নিয়ম ও রীতিনীতির পরিবর্তন হবে না।
কাহার সম্প্রদায়ের সুকান্ত মাহারা বলেন, আমরা মথুরাপুরের রায়বাড়ির পুজোয় দেবী মা’কে বেদিতে তোলা থেকে শুরু করে বিসর্জন দেওয়ার কাজ করে থাকি। আড়াই কিলোমিটার রাস্তা কাঁধে করে প্রতিমা নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দিই। বাপ-ঠাকুরদার মুখ থেকে শুনতে পেয়েছি, এই পুজোর শুরু থেকেই এই কাজ করে আসছেন আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষরা। আগে আমাদের জাতিগত পেশা ছিল পালকি বহন করা। এখন আর তা নেই। জীবিকা নির্বাহের জন্য আমরা অন্যান্য অনেক কাজ করি। কিন্তু পুজোর সময় আমরা প্রতিমা তোলা ও নামানোর কাজ করবই। এজন্য আমরা কোনও টাকা নিই না।