সংবাদদাতা, রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর শহর রায়গঞ্জ থেকে রাজ্য জয়েন্টে প্রথম হয়েছেন সৌরদীপ দাস। বাড়িয়েছেন জেলার গৌরব। তবে খোদ সৌরদীপের জেলাতেই নেই কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। জেলায় ডিগ্রি কোর্সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় মেধাবীদের পড়াশোনার জন্য যেতে হয় ভিন জেলায়। কেউ কেউ চলে যান ভিন রাজ্যেও। প্রতিবছরই উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করেন জেলার ছাত্রছাত্রীরা। জয়েন্টেও সুযোগ পান জেলা থেকে অনেকেই। কিন্তু তাঁদের প্রয়োজনের কথা ভেবে জেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে ওঠেনি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। জেলার বাইরে সন্তানকে পড়াশোনার জন্য যেতে দিতে অনেক অভিভাবক ইতস্তত করছেন। কিন্তু কোনও উপায় নেই। জেলায় অবশ্য পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দু’-তিনটি। কিন্তু জয়েন্ট দিয়ে ডিগ্রি কোর্সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে বাইরেই যেতে হবে।
উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষাবিদ তথা রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের জেলা থেকে বরাবরই ছাত্রছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিক ও জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভালো ফল করে থাকে। অনেকেরই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা থাকে। সেজন্য তারা ভিন রাজ্যে বা ভিন জেলায় যেতে বাধ্য হয়। স্থানীয় পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে আমাদের জেলায় মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠেছে। জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছে। সেভাবেই এখানে একটা সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে উঠলে জেলার ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে থেকে অনেক কম খরচে পড়াশোনা চালাতে পারত বলে আমি মনে করি। শুধু শিক্ষাবিদ হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক হিসেবে এটা আমার একটা বড় চাহিদা।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা কোয়েল সিংহরায় বলেন, গত বছর আমাদের ভাইঝিকে আমরা কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করেছি। বর্তমানে সে সেখানেই থেকে পড়াশোনা করছে। জয়েন্টে ভালো র‌্যাঙ্ক করা সত্ত্বেও জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ না থাকায় আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হলে আমাদের মধ্যে বহু অভিভাবকের সুবিধা হতো।  সন্তানরা ঘরের কাছে থাকত।
কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা গণেশ সূত্রধর বলেন, আমার ছেলে বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। যখন সে জয়েন্টে ভালো ফল করেছিল, তখনও এখানে কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল না। এতদিন পরেও সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। জয়েন্টের পর উচ্চশিক্ষার সমস্যা চলছেই। জেলার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের জন্য অবশ্যই একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা উচিত। জয়েন্টে রাজ্যে প্রথম হলেও রায়গঞ্জের অশোকপল্লির বাসিন্দা সৌরদীপ দাস কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি গবেষক হতে চান। সেজন্য তাঁর লক্ষ্য আইআ‌঩ইটি বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের মতো কোনও প্রতিষ্ঠান।
উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন নামিদামি স্কুল রয়েছে। রায়গঞ্জ শহরের করোনেশন হাইস্কুল, রায়গঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইসলামপুর শহরের ইসলামপুর হাইস্কুল থেকে প্রতিবারই পড়ুয়ারা ভালো ফল করেন। তবে সমস্যা হয় তারপরই। জয়েন্টের তালিকায় নিজেদের মেধা অনুযায়ী জায়গা করে নিলেও জেলার বাইরে পড়তে যেতে অনেকেরই সমস্যা হয়। সন্তানকে বাইরে রেখে পড়াশোনা করাতে গেলে আর্থিক চাপ সামলাতে হয় অভিভাবকদের।  সৌরদীপ দাস-ফাইল চিত্র