নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুরের জেলা সদর রায়গঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার চেয়ারম্যান ও কংগ্রেস বিধায়ক এনিয়ে শনিবার একে অপরের বিরুদ্ধে আঙুল তুললেন। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে রায়গঞ্জ শহর কার্যত বিপর্যস্ত। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পুরসভা এলাকার ৪, ৮, ১৩, ১৪ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। ৬, ৭, ১৬, ১৭ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ জলে ভাসছে। বিশেষত শক্তিনগর, বন্দরপাড়ায় কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। বহু বাড়ির একতলার ঘর নোংরা জলে ছয়লাপ। যাঁদের বাড়ি দোতলা নয়, তাঁরা স্কুলঘর, মন্দির বা অন্যত্র ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরের মধ্যে সাপ ঢুকে পড়ছে। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
বন্দরপাড়ার খালপাড় কুলিক নদী সংলগ্ন। নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় নর্দমার জল নামছে না। গত চার দিন ধরে এলাকায় জল থইথই অবস্থা। খালপাড়ে ৫০টি পরিবার বসবাস করে। তারমধ্যে ৪০টি পরিবারকেই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হয়েছে। যাঁরা দ্বিতল বাড়িতে রয়েছেন তাঁরা কার্যত গৃহবন্দি। করোনার আবহে নোংরা জল থেকে অন্য রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন অনেকে। খালপাড়ের বাসিন্দা শঙ্কর চৌধুরী, বাবুয়া সাহা বলেন, বাড়ি থেকে বের হলেই কোমর জল। শিশু, বৃদ্ধরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আমরা যে এই চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছি তা খোঁজ নেওয়ার জন্য কোনও প্রশাসনিক কর্তার দেখা মিলছে না। এখানকার অনেকের শৌচালয় ভেঙে গিয়েছে। ফলে অবস্থা খুবই শোচনীয়।
রায়গঞ্জ শহরে জলমগ্ন হওয়ার ঘটনা আজকের নয়। দীর্ঘকাল ধরে ফি বর্ষায় শহরবাসী এই দূরবস্থার মধ্যে পড়েন। বছর চারেক আগে রায়গঞ্জ পুরসভা কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় শাসক দল। শহরে জলমগ্নের ঘটনা নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস পূর্বতন পুর বোর্ডকে কাঠগড়ায় তুললেন। তিনি বলেন, এই পুরসভায় কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিল। প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত কোনও পরিকল্পনা নেননি। নীচু এলাকায় ঘরবাড়ি করার জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। জল নিকাশি ব্যবস্থা করতে কোনও মাস্টার প্ল্যান করেননি। আমরাই প্রথম জল তুলতে রিভার পাম্প ব্যবহার করছি। পাম্প বসানো হয়েছে। জমা জল দ্রুত নেমে যাবে।
শনিবার জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে যান কংগ্রেস বিধায়ক। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান পুরবোর্ড পুরোপুরি ব্যর্থ। সেচদপ্তরকে কাজে লাগাচ্ছে না। কোনও বৈঠক পর্যন্ত করেনি। আমিই জেলাশাসক ও সেচদপ্তরের আধিকারিকদের চিঠি দিয়েছি। তারপর সেচদপ্তর কাজে নেমেছে। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন মাসে ১৫-১৬ বার নর্দমা পরিষ্কার হতো। এখন ছয় মাস অন্তরও নর্দমা পরিষ্কার হয় না। গত চার বছরে নিকাশি নিয়ে পুরসভা কী পদক্ষেপ করেছে? দুর্গতরা ত্রাণ পাচ্ছেন না, ত্রিপল পাচ্ছে না।
এদিকে, দুই নেতার তরজাকে অবশ্য জলবন্দি বাসিন্দারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁরা কেবল দ্রুত জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইছেন।