নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: ভিনরাজ্য ফেরত পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্ত নিয়ম মেনে ১০০ দিনের কাজ দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ৩২১১ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যেই ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের উপরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তারমধ্যে ৬০০০ জন কাজ করতে ইচ্ছুক এবং তাঁদের জবকার্ডও রয়েছে। ২০ মে থেকে এই সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। লকডাউনের কারণে ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে শুরুর দিকে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হলেও গত ২০ এপ্রিল থেকে জেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ শুরু করা হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে জেলায় এখনও পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৪৯ হাজার শ্রম দিবস ইতিমধ্যেই সৃষ্টি করা গিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে ১ কোটি ২০ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বহু মানুষকে এই কাজ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ৪০০০ বিঘার ফিশারি ফার্ম পন্ড তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জ্যোর্তিময় তাঁতী বলেন, জেলাশাসক চাইছেন সকলে কাজ পান। আমরাও প্রস্তুত হয়ে রয়েছি যাতে বেশি সংখ্যক মানুষকে ১০০ দিনের কাজে শামিল করা যায়। তাই সকলের প্রতি আহ্বান যাঁদের জবকার্ড আছে তাঁরা কাজে আসুন, যাঁদের কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে তাঁরা বিডিও অফিসে যোগাযোগ করুন। যাঁদের নেই তাঁরা পঞ্চায়েত অফিসে যোগাযোগ করুন।
করোনা সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ১০০ দিনের কাজের উপরে তার প্রভাব পড়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে বলে একসঙ্গে অনেক মানুষ কোনও কাজে শামিল হতে পারছেন না। নানা রকম বিধি নিষেধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কোচবিহার জেলায় স্রোতের মতো পরিযায়ী শ্রমিকরা ঢুকতে শুরু করেছেন। জেলা থেকে ভিন জেলা বা ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে যাওয়া মানুষ লকডাউনের কারণে ওই সব জায়গা থেকে নানা ভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। কর্মস্থল থেকে ফিরে আাসার কারণে অনেক মানুষের হাতেই তেমন কোনও কাজ থাকছে না। নিজের এলাকায় পৌঁছে তাঁদের কাউকে কোয়ারেন্টাইনে, কাউকে আবার হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দিন কাটানোর পর স্বাভাবিক কারণেই তাঁদের কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে। কিন্তু সব কিছুই প্রায় বন্ধ থাকায় অনেকেরই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেদের এলাকাতেই ১০০ দিনের কাজে শামিল হতে পারছেন। জব কার্ড থাকলে তাঁরা ১০০ দিনের প্রকল্পের নির্দিষ্ট কাজে শামিল হয়ে অর্থের সংস্থান করতে পারছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় গত সাত দিনে সব মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ শামিল হচ্ছে। নদীবাঁধ স্বশক্তিকরণ, বৃক্ষরোপণ, সোপ কিট, ফিস ট্যাঙ্ক, পোলট্রি শেড তৈরি প্রভৃতির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও চাষ জমি থেকে জল বের করা, বাংলার আবাস যোজনা সহ একাধিক কাজ করা হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা বাইরে থেকে আসার পর তাঁদের নিজেদের এলাকায় ১০০ দিনের যেসব কাজ হচ্ছে সেই কাজে তাঁদের শামিল করা হচ্ছে। গত কয়েক দিন জেলায় প্রায় ৬২ শতাংশ মহিলা, ৫৫ শতাংশ তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষ কাজ পেয়েছেন। এছাড়াও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষকে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হচ্ছে। কোচবিহার-২ ব্লকের পাতলাখাওয়া এলাকায় এই ল঩ক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। - ফাইল চিত্র