সংবাদদাতা, কুমারগ্রাম: লকডাউনের কারণে কৃষি দপ্তর এ বছর কৃষকদের মধ্যে আমন ধানের বীজ সরবারহ করতে পারছে না। উন্নতমানের বীজ কেনার মতো টাকা দরিদ্র কৃষকদের হাতেও এই মুহূর্তে নেই। আমন ধান চাষের মরশুম শুরু হয়ে গেলেও তাই কৃষকরা এখনও চাষের প্রস্তুতি নিতে পারেননি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বীজ না পাওয়া গেলে এ বছর আলিপুরদুয়ার জেলা এবং কোচবিহারের জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার অনেক কৃষক আমন ধানের চাষ করতেই পারবেন না। যদিও কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, বীজ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
প্রতিবছর কৃষি দপ্তর থেকে বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে উন্নতমানের আমন ধানের বীজ দেওয়া হয়। আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লক এবং আলিপুরদুয়ার-২ ব্লক সহ কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার অনেক কৃষক রয়েছেন যাঁদের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো নেই। দরিদ্র ওই কৃষকরা মূলত সরকারি এই সহযোগিতার উপরে নির্ভর করেই তাঁদের জমিতে আমন ধানের চাষ করে থাকেন। বীজ দেওয়ার দাবি নিয়ে চাষিরা কৃষি দপ্তরেও দৌড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু কোনও আশার বাণী তাঁরা পাচ্ছেন না।
লকডাউনের জন্য ভিনরাজ্য বা জেলা থেকে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক তুফানগঞ্জ মহকুমার ১ এবং ২ ব্লকে সম্প্রতি ফিরে এসেছেন। ওই শ্রমিকদের নিজেদের সামান্য কিছু জমিও রয়েছে। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার পর অনেকে নিজেদের বাড়িতেও ফিরে এসেছেন। রোজগার বন্ধ থাকার জন্য ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের জমিতে আমন ধানের চাষ করতে চাইছেন। কিন্তু তাঁরাও বীজ পাচ্ছেন না।
আলিপুরদুয়ার জেলা কৃষি অধিকর্তা হরিশ চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য অন্যান্য বছরের মতো এবার সেভাবে আমন ধানের বীজ আসেনি। লকডাউনের জন্যই এমনটা হয়েছে। অল্প যা বীজ এসেছে তা চাহিদা মতো দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তুফানগঞ্জ-১ ব্লক কৃষি অধিকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, এখনও পর্যন্ত আমন ধানের বীজ ব্লকে আসেনি। তুফানগঞ্জ-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের ছামিউল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি কয়েকদিনের মধ্যে সরকারিভাবে আমন ধানের বীজ চলে আসবে। গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে দরিদ্র কৃষক এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ওই বীজ বিতরণ করা হবে।
কৃষকদের এই সমস্যার বিষয়টি জানতে পেরে সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষকসভা তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে আমন ধানের বীজ বিতরণ করেছে।
তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের মধ্য বালাভূত এবং গোপালেরকুঠি গ্রামের কৃষক সহিদুল হক ও আবদুল মোতালেব মিঁয়া বলেন, আমাদের ১২ বিঘার মতো জমি আছে। কিন্তু বীজ কেনার মতো হাতে টাকা নেই। তাই এবার হয়তো ধান চাষ করতেই পারব না। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জ-১ ব্লকে প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়। আলিপুরদুয়ার জেলাতেও একলক্ষ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। একবিঘা জমিতে চাষ করার জন্য এক কেজির উপর বীজ প্রয়োজন হয়। উন্নতমানের এককেজি বীজের দাম প্রায় ৩০০ টাকা।