রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
গ্রামের ফিরেও বাড়ি যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত পরিযায়ী শ্রমিকরা। বাধ্য হয়ে কেউ গ্রামের কাছে নদীর ধারে তাঁবু খাটিয়েছেন। কেউ থাকছেন নৌকায়। আবার কিছু শ্রমিকের ঠাঁই হয়েছে গ্রামের ধারে ফাঁকা মাঠে। খোলা আকাশের নীচে তাঁবু খাটিয়ে এখন তাঁরা ‘নেগেটিভ রিপোর্ট’ আসার অপেক্ষা করছেন। তাহলেই ফিরতে পারবেন বাড়ি। বৃষ্টিতে ভিজে রাত কাটাচ্ছেন। কখনও নদীর হাওয়ায় দাপটে বারবার নিভে যাওয়া হ্যারিকেন সামলে কাটছে রাত। কবে আসবে রিপোর্ট, তাই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, তাঁরা শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে বললেও বাড়ির কাছাকাছি থাকার উদ্দেশ্যেই এইভাবে তাঁবু খাটিয়ে খোলা আকাশের নীচে থাকছেন শ্রমিকরা।
এবিষয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পৌষা রায় বলেন, আমরা তাঁদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যেতে বলেছিলাম। তবে তাঁদের দাবি, এলাকায় পৌঁছনোর পর জেলা প্রশাসন পরীক্ষার জন্য যে লালারস নিয়েছে, তার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এভাবেই দিন কাটাবেন তাঁরা। আমরা প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে শ্রমিকদের সাহায্য করছি।
ওই শ্রমিকদের মধ্যে একজন আব্দুল সাত্তার বলেন, আমরা দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর লকডাউন হয়ে যাওয়ার আমরা ব্যাপক সমস্যায় পড়ি। এরপর ট্রেন চলাচল শুরু হলে আমরা শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছই। সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে গেলে এলাকাবাসীরা আমাদের আটকে দেয়। বর্তমানে আমরা তাঁবু খাটিয়ে খোলা আকাশের নীচে রয়েছি। খুব সমস্যায় আছি। ঝড়ের জন্য সমস্যা বেড়েছে। তাড়াতাড়ি রিপোর্ট হাতে পেলে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারব।
আরও এক শ্রমিক শ্যাম দাস বলেন, বৃন্দাবনে কাজ করতাম হোটেলে কর্মী হিসেবে। সেখান থেকে ফিরে বাড়ি ঢুকতে গেলে পাড়ার লোকেরা বাধা দেয়। যদিও আমরা ফিরে আসার সময় বহুবার টেস্ট করিয়েছি এবং সব জায়গায় আমাদের রিপোর্ট নেগেটিভই এসেছে। তা সত্ত্বেও পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। তাই নদীর ধারে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের মধ্যে কয়েকজন নৌকার মধ্যে থাকছে। ঝড়ের রাতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
মুম্বই, বৃন্দাবন, দিল্লি থেকে বেশ কিছু শ্রমিক গত তিনদিন আগে বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পৌঁছেছেন। কিন্তু তাঁরা আসছেন একথা জানতে পারার পর থেকে গ্রামের কিছু মানুষ তাঁদের পরিবারকে বারবার হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ। কোনওভাবেই যাতে সেইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয় বাড়ির লোককে। গত ১৮ তারিখ রাতে যখন তাঁরা গ্রামে পৌঁছন তখন পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে তাঁদের অন্য কোথাও থাকার বন্দোবস্ত করতে বলেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পৌষা রায় তাঁদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তবে গ্রাম থেকে সেই সেন্টার অনেকটা দূরে থাকায় তাঁরা সেখানে যেতে রাজি হননি।। পরবর্তীতে নিজেরাই ত্রিপল দিয়ে তাঁবু খাটান গ্রাম সংলগ্ন এলাকায়। এইভাবে বর্তমানে মোট ৩২ জন শ্রমিক রয়েছেন। রিপোর্ট এলে তবেই তাঁরা ঘরে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন।