বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির জন্যই বিখ্যাত দার্জিলিং টি। বিশ্বে দার্জিলিংয়ের চা মানেই ফার্স্ট ফ্ল্যাশের চা। মূলত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বাগানগুলিতে চা উৎপাদন হয়। মরশুমের প্রথম চা পাতা ফার্স্ট ফ্ল্যাশ নামে পরিচিত। এপ্রিলে নিলামের মাধ্যমে রপ্তানি হওয়া সেই চা পাতা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। চা প্রেমীদের কাছে এই পাতার স্বাদ যেমন আলাদা, তেমনই পাহাড়ের চা শিল্পে খুশি বয়ে আনে মরশুমের প্রথম চা পাতা। বছরের সিংহভাগ রোজগার হয় এই পাতা থেকেই।
চা বণিক মহল সূত্রে খবর, গত বছর এ রাজ্যে চা উৎপাদন হয়েছিল ৩৯ কোটি ৪০ লক্ষ কেজি। যার প্রায় ২৫ শতাংশ ছিল ফার্স্ট ফ্ল্যাশ টি। এবার সেই উৎপাদনের পরিমাণ অনেক কম। একইসঙ্গে রপ্তানি বন্ধ থাকায় তা বাগানে পড়েই নষ্ট হচ্ছে।
বিশিষ্ট চা গবেষক তথা টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি রামঅবতার শর্মা বলেন, মোট চা উৎপাদনের নিরিখে ২০-২৫ শতাংশ এই ফার্স্ট ফ্ল্যাশ টি। বাগানের মোট আয়ের সিংহভাগ এই চা থেকে হয়। মরশুমের অন্যান্য চায়ের চেয়ে এর বাজার মূল্য পাঁচগুণ বেশি। কখনও এর চেয়েও বেশি হয়। উৎপাদিত চায়ের ৮০ শতাংশ বিদেশে যায়। লকডাউনের জেরে বাগান পরিচর্যার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এতে মরশুমের দ্বিতীয় চা উৎপাদনও ব্যাহত হবে। ফার্স্ট ফ্ল্যাশ টি থেকে বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা আমরা করছি।
ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিপিএ) মুখপাত্র অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, করোনার জেরে ফার্স্ট ফ্ল্যাশ চায়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। বাইরের যে সমস্ত দেশে এই চায়ের রপ্তানি হয় সেসব দেশেও করোনা থাবা বসিয়েছে। করোনার কারণে চায়ের নিলামে যোগ দিতে পারেনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। অথচ দার্জিলিংয়ের মোট চায়ের ২৫ শতাংশ নির্ভর এই চায়ের উপর। ফলে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা। এই পরিস্থিতিতে আমরা মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সংগ্রহ করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে জানাব।
টি টেস্টার শুভঙ্কর বসু বলেন, ফার্স্ট ফ্ল্যাশের চায়ের বাজার মূলত বিদেশ। বিশ্বজুড়ে চলা করোনার প্রভাব এসেছে বিশ্বখ্যাত দার্জিলিংয়ের চায়েও। এই চা এবার বাজার হারিয়েছে। বাগানগুলিতে কাজ বন্ধ রয়েছে। এরফলে চা শিল্পে সঙ্কট বাড়বে।
উত্তরবঙ্গের ৩০২টি চা বাগান থেকে উৎপাদিত এই চায়ের বেশিরভাগটাই রপ্তানি হয় বিদেশে। নিলামের মাধ্যমে সেই চা চলে যায় জার্মান, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে। কিন্তু এবার ছবিটা উল্টো। করোনার কারণে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। বন্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক উড়ান। এর ফলে চায়ের নিলামে যোগ দিতে পারেনি বহু দেশ। চা শ্রমিকদের একাংশের দাবি, এরআগে ২০১৭ সালে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিল পাহাড়ের চা শিল্প। সেই রেশ কেটে একটু স্বাভাবিক হতেই অনিশ্চয়তার মেঘ ফের জমেছে পাহাড়ের আকাশে।