বাংলা নিউজ এজেন্সি: একুশ দিনের লকডাউনে দুই দিনাজপুর জেলায় কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে এদিন সকালে রাস্তায় বেরিয়েছে কিছু মানুষ। আর তাই বালুরঘাটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তিন ঘণ্টার জন্য বাজার খোলার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
এদিন সকাল থেকেই বালুরঘাট শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালান প্রশাসনের আধিকারিকরা। সকাল থেকে অবশ্য রাস্তাঘাট ফাঁকাই ছিল। যদিও ভিড় জমেছিল বাজারে। জেলাশাসক নিখিল নির্মল, অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণব ঘোষ, মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখ্যোপাধ্যায় সহ অন্য আধিকারিকরা এদিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তহবাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এরপর থেকে শহরের মুদির দোকান ও বাজার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১০টা অবধি খোলা থাকবে।
অহেতুক রাস্তায় বের হওয়ার জন্য কুমারগঞ্জ থানা ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কে রুট মার্চ করে পুলিস কয়েকটি দোকান বন্ধও করে দেয়। পুলিস সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, বৃহস্পতিবার আমি জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় টহল দেব। কোথাও কেউ লকডাউনের নির্দেশ অমান্য করলে আমাদের হেল্পলাইন নম্বরে ৭৪৭৭৭৮৬৪৯৭ জানান। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এদিন সকালে বালুরঘাট শহরের প্রবীণ নাগরিকদের বাড়ি গিয়ে সব্জি ও আনাজ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করল বালুরঘাট থানার পুলিস। বয়স্ক নাগরিকদের পক্ষে সবসময় বাড়ির বাইরে বেরনো সম্ভব হয় না। তাই এদিন টোটোতে চাপিয়ে সব্জি নিয়ে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাওয়া হয়। বাজারদর থেকে কম দামেই সেই সব্জি বিক্রি করা হয়েছে।
বালুরঘাট শহরে ইতিমধ্যেই প্রণাম নামে একটি প্রকল্পের অধীনে প্রবীণ নাগরিক, যাঁদের বাড়িতে আর কেউ থাকেন না, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করে নানা সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের অধীনেই এদিন সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। পুলিসের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রবীণরা। উত্তমাশা এলাকার বাসিন্দা রীমা মণ্ডল বলেন, আমার পক্ষে বাজারে গিয়ে ভিড় ঠেলা সম্ভব নয়। এদিন পুলিস এসে সব্জির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
এদিকে জেলা তৃণমূলের তরফে বৃহস্পতিবার থেকে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে চাল ও আলু দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়। তপনের বিধায়ক তৃণমূলের বাচ্চু হাঁসদা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫০ হাজার টাকা দান করেছেন।
অন্যদিকে, উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে এদিন সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। বাজারে ও মুদির দোকানে অবশ্য ভিড় করেন ক্রেতারা। প্রশাসনের তরফে খোলা দোকানের সামনে তিন ফুট দূরত্ব রেখে মার্কিং করে দেওয়া হয়। রায়গঞ্জের পুলিস সুপার সুমিত কুমার, পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস সহ অন্য আধিকারিকরা এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি চালান। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এদিন কিছু সব্জির দাম খানিকটা বেড়েছে। ১৫ টাকা কেজির আলু ২০ টাকা, ২৫ টাকার পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে স্থানীয় বাজারে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কোনও অভাব নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা।
ইসলামপুরের চিত্রটাও এদিন ছিল অনেকটা একইরকমের। ইসলামপুর হাসপাতালের সুপার নারায়ণ মিদ্যা বলেন, এদিন সর্দি কাশিতে আক্রান্ত আরও তিনজনকে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইসলামপুর পুলিস জেলার সুপার শচীন মক্কর বলেন, এদিন রাস্তায় লোক কম ছিল। সর্বত্র পুলিস মোতায়েন ছিল। এদিকে জানা গিয়েছে, ডালখোলার পূর্ণিয়া মোড়ে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া বহু ব্যক্তিকে তাড়া করে ঘরে ঢোকায় পুলিস। ইসলামপুরের বিভিন্ন বাজারে গিয়েও বাসিন্দাদের দ্রুত বাড়ি ফেরার কথা বলেছে পুলিস।