খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
রাজ্যের ব্যস্ততম শহরগুলির মধ্যে শিলিগুড়ি অন্যতম। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান সীমান্তবর্তী এই শহরে প্রতিদিন ভিড় করেন কাতারে কাতারে মানুষ। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবারও রাস্তায় মানুষের ভিড় দেখা যায়। রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বন্ধেও রাস্তায় নামেন বাসিন্দারা। কিন্তু এদিন কর্মচঞ্চল শহর দিনভর ছিল কার্যত জনশূন্য। শহরের জনবহুল এলাকাগুলির মধ্যে জংশন অন্যতম। এখানে তেনজিং নোরগে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস, শিলিগুড়ি জংশন রেল স্টেশন, ট্যাক্সিস্ট্যান্ড, এসজেডিএ মার্কেট, এসডিও অফিস রয়েছে। সকালে এই এলাকায় হাতেগোনা কয়েজন লোক ছিলেন। তাঁদের কেউ বাড়ি ফেরার বাসের অপেক্ষা করছিলেন। কেউ আবার সবে বাস থেকে স্ট্যান্ডে নেমেছেন। বাস টার্মিনাসে পর পর দাঁড় করানো রয়েছে বাস। গেটের সামনে চা’র দোকানে সরকারি বাসের কয়েকজন চালক ও কন্ডাক্টারের জটলা। তাঁদের মুখে ছিল মাস্ক। বেসরকারি বাসের কন্ডাক্টার ও খালাসিদের যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতা, হাঁকডাক এদিন ছিল না। এনবিএসটিসি’র শিলিগুড়ি ডিপোর ম্যানেজর দীপঙ্কর দত্ত বলেন, যাত্রী না থাকলেও কিছু বাস চালানো হয়েছে।
শহরের আরএকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এনজেপি স্টেশনের ছবিটাও অনেকটা একইরকম ছিল। অন্যদিন এই স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেন থেকে স্রোতের মতো যাত্রীরা নামলেও এদিন ট্রেন থেকে নামতে হাতেগোনা কিছু যাত্রীকে দেখা যায়। বাড়িতে ফেরার যানবাহন পেতে গিয়ে তাঁদেরকে হিমশিম খেতে হয়। অধিকাংশ প্ল্যাটফর্মই ছিল ফাঁকা। প্ল্যাটফর্ম জীবাণুমুক্ত করছিলেন সাফাই কর্মীরা। বাগডোগরা বিমানবন্দরেরও ছিল ফাঁকা। এদিন বেশকিছু সংস্থা তাদের উড়ান বাতিল করে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এদিন বিমানে এসেছেন প্রায় ১০০০ জন। বাগডোগরা বিমানবন্দরের ডিরেক্টার পি সুব্রমণি বলেন, নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে। কোনও যাত্রীর মধ্যে করোন ভাইরাস মেলেনি।
শুধু বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও বিমানবন্দর নয়, শহরের লাইফ লাইন হিলকার্ট রোডও ছিল শুনশান। হাসমিচক থেকে দার্জিলিং মোড়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন উড়ালপুল সর্বত্রই ছিল ফাঁকা। মাঝেমধ্যে টহল দিয়েছে পুলিস ভ্যান ও সংবাদমাধ্যমের যানবাহন। কখনও কখনও রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেখা গিয়েছে। নিত্যদিন দার্জিলিং মোড়ে যানজট থাকলেও এ দিন তা ছিল না। শহরের ব্যস্ততম কাছারি মোড় থেকে হাসপাতাল মোড়, বিধান রোড, পানিট্যাঙ্কি মোড়, বর্ধমান রোড সহ বিভিন্ন অলিগলির রাস্তা ছিল জনশূন্য। একইসঙ্গে হিলকার্ট রোডের বাজার, বিধানমার্কেট, নিবেদিতা মার্কেট, হকার্সকর্নার, হংকং মার্কেট সহ সমস্ত বাজারের দোকান, গলির রাস্তার চা ও পানের দোকানের ঝাঁপও নামানো ছিল। মাটিগাড়ার শপিংমল, সেভক রোডে শপিংমল বন্ধ ছিল। কোথাও কোনও মানুষকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়নি।
দুপুরের দিকে মহানন্দা নদীতে গুটিকয়েক কচিকাঁচাকে মাছ ধরতে এবং কিছু এলাকায় পাড়ার মাঠে শিশুদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। এরপর কৌতূহলী এক-দু’জন বাইক নিয়ে বের হন। অনেকেই সেল্ফি তোলেন, ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেন। বিকেল ৫টা বাজতেই বাড়ি বাড়ি কাঁসর, ঘণ্টা শাঁখ, থালা বাজাতে শোনা যায়। নাগরিকরা বলেন, মারণ ভাইরাস করোনা মোকাবিলায় এদিন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গল্প করে টিভি দেখে ও সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়ে কাটিয়েছি। এককথায় গৃহবন্দি ছিলাম।