বিএনএ, মালদহ: কালিয়াচক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাদক কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মালদহ জেলা পুলিস ও প্রশাসনের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। জেলার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে প্রধানরাও উপস্থিত থাকেন। তাঁদের সামনে অনেক গোপন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেইসব তথ্য পাচারকারী, দুষ্কৃতী, অনুপ্রবেশকারীদের কাছে পৌঁছে গেলে প্রশাসন বিড়ম্বনায় পড়তে পারে বলে আধিকারিকরা মনে করছেন। একইসঙ্গে দেশ তথা রাজ্যের সুরক্ষাও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিসের এসটিএফ ও সিআইডি সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তাতে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। ধৃতদের মধ্যে কালিয়াচক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ আমিরুদ্দিন রয়েছেন। তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মণিপুর থেকে কলকাতা হয়ে মালদহে ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসার যে চক্র রয়েছে, ধৃত প্রধান তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে পুলিস জানিয়েছে। যদিও দল ওই প্রধানের পাশে দাঁড়াবে না বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে নেশার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফেন্সিডিল পাচারে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে মাফিয়ারা ইয়াবা ট্যাবলেটের উপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশে চড়া দামে ওই ট্যাবলেট বিক্রি হয়। তাছাড়া একটি ছোট ব্যাগে বেশ কয়েক হাজার টাকার ট্যাবলেট সহজেই পাচার করা হয়। নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের ক্ষেত্রে অনেক বড় পাত্র বা ব্যাগ লাগে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, সীমান্তবর্তী জেলার ব্লক বা পঞ্চায়েতগুলি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ওইসব এলাকার প্রধান বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিদের নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা সহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও অনেক সময়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন বৈঠকে পাচার সহ অনেক গোপন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। প্রধান বা জনপ্রতিনিধিদের তা বাইরে প্রকাশ করা উচিত নয়। কিন্তু কোনও জনপ্রতিনিধি নিজেই পাচারচক্রে যুক্ত থাকলে আলোচ্য বিষয় সহজেই দুষ্কৃতীদের কাছে পৌঁছে যাবে। যা সকলের বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে।
জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, প্রধান বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এর আগে বেআইনি কাজে যুক্ত হয়নি, এমন নয়। কিন্তু রাজনৈতিক হিংসা বা খুন, জখমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া আর পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি এক নয়। আন্তঃরাষ্ট্র মাদক পাচারের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় জঙ্গি-যোগ থাকে। মাদক বিক্রির লভ্যাংশ সন্ত্রাসবাদীরা অস্ত্রসস্ত্র কেনার কাজে লাগিয়ে থাকে। ফলে কালিয়াচক-১ অঞ্চলের প্রধানের সঙ্গে মাদক চোরাচালানের যোগ থাকার বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। এমনিতেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অন্যতম উপদ্রুত জেলা হিসেবে মালদহকে ধরা হয়। কলকাতা পুলিসের বিশেষ দলের হাতে ওই প্রধান গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি অন্যমাত্রা পেয়েছে।