সংবাদদাতা, মালদহ: অসাধু চক্রের বাড়বাড়ন্তের কথা মাথায় রেখেই এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ত্রিস্তরীয় পরিদর্শন বলয়ের ব্যবস্থা রাখতে চায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রেই থাকছেন পর্ষদ মনোনীত একজন অতিরিক্ত অধীক্ষক। জেলা প্রশাসনের কর্তারাও পরীক্ষার দিনগুলিতে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে আচমকা নজরদারিতে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। স্পর্শকাতর পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির দিকে পরীক্ষা পরিচালন কমিটি ও প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে বলে জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। মহকুমা স্তরেও পরিদর্শক দল গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এর আগে মালদহের বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কীভাবে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে যায়, তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্তও করেছিল শিক্ষা দপ্তর। এছাড়াও বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বাড়াবাড়ি রকমের নকল হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। তবে মালদহের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠা নতুন কিছু নয়। এবার যাতে একই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সতর্ক মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
এবছর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধি হিসাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক বিপ্লব গুপ্ত বলেন, রাজ্যস্তরের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। শিক্ষকরা এবার মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষার হলে তো দূরের কথা, পরীক্ষা কেন্দ্রেই যেতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরাও যেন কোনও রকম মোবাইল ফোন বা অন্য কোনও গ্যাজেট নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে না পারে, তারজন্য বিশেষ নজরদারি থাকছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, জেলা স্তর ও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি মহকুমা স্তরেও একটি বিশেষ টিম পরিদর্শন করবেন পরীক্ষার দিনগুলিতে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন ও শিক্ষা) অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, গত বছরও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ পদাধিকারীরা মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ঘুরে ঘুরে নজরদারি চালিয়েছিলেন। এবারও একই পদ্ধতিতে নজরদারি চলবে। বিশেষ করে অঙ্ক বা ইংরাজির মতো বিষয়গুলির পরীক্ষার দিন অতিরিক্ত নজরদারি চালাবেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, এবছর মালদহে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৯০৩ জন। এদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩০০ জন। নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৯ হাজার ৮৪৪ জন ছাত্র এবং ২৪ হাজার ৪৫৬ জন ছাত্রী রয়েছে। পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে মোট ১৯টি স্কুল থেকে। ১০৬ টি স্কুলে পরীক্ষা হবে।
এছাড়াও পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র সেন্টারগুলি থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময়ে সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে একটি সমন্বয় বৈঠক হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। বিশেষ করে কালিয়াচকের সুজাপুর থেকে জালালপুরের মধ্যবর্তী এলাকাতে যেন কোনও ভাবেই সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যানজট তৈরি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে বলে ট্র্যাফিক পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর আগেও মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা সত্ত্বেও বারংবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় বিব্রত হয়েছিলেন প্রশাসন ও পরিচালন কর্তৃপক্ষ। এবার সেই একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি রুখতে পারাই পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষে একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে মালদহের শিক্ষা মহল।