বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দুর্গাপুজোর মতোই থিমের ছোঁয়া এখন লেগেছে সরস্বতী প্রতিমাতেও। আগের মতো সাদামাটা প্রতিমা এখন আর পছন্দ নয় অনেক উদ্যোক্তাদের। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেলার কুমোরটুলিতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রতিমার অলঙ্কার, পোশাক, সাজসজ্জা- সবেতেই এসেছে ভিন্নতা। আগের মতো সাদা পাড়ের শাড়ি ও শোলার অলঙ্কার আজকাল আর মন কাড়ে না। চোখ ধাঁধানো বিভিন্ন ডিজাইনার শাড়ি থেকে শুরু করে চুমকি ও জরির কাজ করা বুলেন সেটের অলঙ্কারের চল এসেছে মৃৎশিল্পে। জেলার মৃৎশিল্পীরা জানান, বর্তমান বাজারে আধুনিক ডিজাইনের ভালো কাজ না করতে পারলে প্রতিমা পড়েই থাকবে, বিক্রি আর হবেই না। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতিমা তৈরির সময় স্টাইল, উচ্চতা ও গয়নার ডিজাইনের উপর বিশেষ নজর রাখতে হচ্ছে।
বাজারগুলিতে একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে সরস্বতী প্রতিমায় নতুনত্ব। ছাঁচের প্রতিমা হোক বা বড় প্রতিমা, কোথাও দেখা যাচ্ছে রথে চেপে আসছেন সরস্বতী। আবার কোথাও বীণা নয়, তানপুরার উপর বসে রয়েছেন বীণাপানি। কোথাও আবার তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন তবলার পাশে। কোন প্রতিমা কতটা ‘আধুনিক’, তার উপরই নির্ভর করছে প্রতিমার দাম। মৃৎশিল্পীরা আরও জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে প্রতিমারও।
গঙ্গারামপুরের মৃৎশিল্পী অমর পাল বলেন, বর্তমান মৃৎশিল্পের বাজারে এখন কড়া প্রতিযোগিতা। এখন ডিজাইন ও স্টাইলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আগের মতো প্রতিমাকে সাদা শাড়ি ও শোলার অলংকার পড়ালে তা আর চোখে লাগে না ক্রেতাদের। এখন প্রতিমার চুলে কখনও হয় খোঁপা, আবার কখনও চুল স্ট্রেট করতে হয়। আবার প্রতিমার শাড়ির ক্ষেত্রে আমাদের রীতিমতো বাজারে লক্ষ্য রাখতে হয়। এখন বাজারের যেসব শাড়ি চলছে, প্রতিমাকেও সেইসব শাড়ি পরালে বিক্রি বাড়ে। মানানসই করেই প্রতিমার সাজসজ্জা করতে হচ্ছে। আমাদের এখন আমেদাবাদ থেকে থেকে ভালো ডিজাইনের শাড়ি ও প্রতিমার অলঙ্কার নিয়ে আসতে হচ্ছে। লোকাল শোলার অলংকার ও শাড়ি চলছে না। পাশাপাশি মৃৎশিল্পেও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। ১৫০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা দামের প্রতিমাও বিক্রি হচ্ছে।
গঙ্গারামপুর শহরের গৃহিনী সুজাতা রায় বলেন, শহরের ফুটবল মাঠ এলাকায় সরস্বতী প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে। আমার ছেলের এবারে হাতেখড়ি হবে, তাই ভালো প্রতিমা নেওয়া হবে। প্রতিমা দেখতে ভালো না হলে ভালো লাগে না। এখন তো আমাদের শহরেই অনেক সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে। আধুনিক সাজের কোনও একটি প্রতিমা বেছে নিতে হবে। যদিও এবারে প্রতিমার দাম একটু বেশিই রয়েছে।
বালুরঘাট শহরের বাসিন্দা রথীন পাল বলেন, শহরজুড়ে ছাঁচের প্রতিমার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্টাইল ও ডিজাইন লক্ষ্য করা গিয়েছে। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা দামের প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে বাজারে। দাম নির্ভর করছে আধুনিক ডিজাইন, অলংকার ও স্টাইলের উপর। আগে তো আমরা সাদা পাড়ের শাড়ি ও সাদা অলঙ্কার পড়ানো প্রতিমাই কিনতাম। কিন্তু এখন সব রঙিন শাড়ি পড়া সরস্বতী পাওয়া যাচ্ছে। সকলেই প্রতিমা কিনতে গিয়ে নতুনত্ব খুঁজছেন। তা পেয়েও যাচ্ছেন। তবে প্রতিমার গড়ন যতই আধুনিক হোক না কেন, তাতে ভক্তির কোনও ফারাক হবে না। সকলে ভক্তিভরেই পুজো দেবেন।