বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
একদিকে সব হারানোর যন্ত্রণা তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে সরকারি উদ্যোগে ত্রাণ না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে পাওয়া ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও দুর্গতরা এখনও সরকারি সাহায্য পাননি। যে কারণে কার্যত অসহায় হয়ে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন। উচ্ছেদের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বাড়ি। সেই ভাঙাচোরা ধ্বংসস্তূপের ভিড়ের মধ্যে বাসিন্দারা ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে প্রয়োজনীয় নথি না পেয়ে হয়রান হচ্ছেন। একদিকে বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অন্যদিকে এনআরসি আতঙ্কে প্রয়োজনীয় নথি— সব মিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে ওই দুর্গত পরিবারগুলি।
এবিষয়ে দুর্গতরা বলেন, রেল পুলিস আবাস যোজনার ঘর ভেঙে দেওয়ায় সব তছনছ হয়ে গিয়েছে। কোন জিনিস কোথায় গিয়েছে, কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। প্রয়োজনীয় অনেক নথি খুঁজে পাচ্ছি না। ধ্বংসস্তূপের মাঝে আমরা দিন কাটাচ্ছি। সরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বা ত্রিপল দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃপক্ষ আমাদের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিয়ে তো আরও বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এখন ঘর সামলাব? না নথি খুঁজব? কিছুই মাথায় আসছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, নাম বলে সমস্যার কথা জানালে এলাকার দাদারা এসে হয়রানি করে। বিধবা মহিলা পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই। তবে খুব সমস্যায় আছি।
এলাকার আরও এক বাসিন্দা দ্বিজেন দাস বলেন, ঘর বানিয়ে বসবাস করছিলাম। ট্রেনে মুড়ি ঘুগনি বিক্রি করি। ১০-১২ জন পুলিস কর্মী এসে বাড়ি ভেঙে ছত্রখান করে দিয়েছে। সেই সমস্যা তো রয়েছেই, তবে আরও উদ্বেগের বিষয় আমার ভোটার কার্ড সেদিন থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। এদিকে এনআরসির আতঙ্কে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, অন্যদিকে বাড়ি হারিয়ে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি ।
পুরাতন মালদহ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের মৃণালিনী মণ্ডল মাইতিকে ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এবিষয়ে সহ সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের হারেজ আলি বলেন, ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা এনিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। পুরাতন মালদহ ব্লকের বিডিও ইরফান হাবিব বলেন, গ্রামবাসীদের দাবি খতিয়ে দেখা হবে।
পুরাতন মালদহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা জওহর ঘোষ বলেন, এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমাদের দলীয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এলাকার আরএসপি নেতা সর্বানন্দ পাণ্ডে বলেন, যাদের ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের কাছে সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া উচিত।
পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নলডুবিতে রেললাইনের ধারে শতাধিক পরিবার বসবাস করছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে আবাস যোজনার ঘর পেয়েছিলেন বলে দাবি। যদিও সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময় রেলের জমিতে বানানো আবাস যোজনার ঘর ভেঙে দেয়। রেল পুলিসের উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন অনেকেই প্রয়োজনীয় নথি সামলে রাখতে পারেননি। যেকারনে হুড়োহুড়িতে অনেকেই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড হারিয়ে ফেলেছেন। পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দারা ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের কেউ এখনও পাশে দাঁড়ায়নি।