সংবাদদাতা, পতিরাম: পুরসভার আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হতেই এবার বালুরঘাটে পুরভোটের হাওয়া গরম করতে বিজেপি আন্দোলনে নেমে পড়েছে। আসন্ন পুরভোটের আগে তাদের স্লোগান, এই পুরসভা অনাথ আশ্রমের মতো। কোনও পরিষেবাই তারা দিতে পারে না। হয় না নির্বাচনও। তাই শহরবাসীরা অনাথ। বিজেপির দাবি, একমাত্র তারাই পারে সুষ্ঠু পরিষেবা দিয়ে শহরবাসীর এই অনাথ দশা ঘোচাতে। এনিয়ে অবশ্য পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও আরএসপি। সব মিলিয়ে ভোটের ঢাকে কাঠি না পড়তেই বালুরঘাট পুরসভায় হাওয়া গরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যেই এই ‘অনাথ আশ্রম’ স্লোগান নিয়ে আন্দোলনেও নেমে পড়েছে বিজেপি। বিজেপির বালুরঘাট টাউন সভাপতি সুমন বর্মন বলেন, আমরা বালুরঘাট পুরসভাকে অনাথ আশ্রম বলে ঘোষণা করেছি। কারণ সেখান থেকে শহরের বাসিন্দারা কোনও পরিষেবাই পান না। পুরভোটের আগে আমরা এই স্লোগান তুলেই আন্দোলনে নামছি। এদিকে বিজেপির এই রাজনৈতিক কৌশলকে সস্তার রাজনীতি বলে দাগিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বামেরা অবশ্য বিজেপির কৌশলকে পাত্তা দিতে নারাজ। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসক থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারাও।
রবিবার সকালে জেলা বিজেপি কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বেরিয়ে বালুরঘাট পুরসভার সামনে এসে জমায়েত করে। সেখানে বিজেপি নেতৃত্ব ফেস্টুন টাঙিয়ে পুরসভাকে অনাথ আশ্রম বলে ঘোষণা করে। বিজেপির অভিযোগ, ১৬ মাস ধরে পুরসভার চেয়ারম্যান নেই। বাসিন্দারা বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই পুরসভাকে অনাথ আশ্রম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজেপির বালুরঘাট টাউন সভাপতি সুমন বর্মন বলেন, প্রায় ১৬ মাস ধরে বালুরঘাট পুরসভায় কোনও বোর্ড নেই। এতে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমরা পুরসভাকে অনাথ আশ্রম হিসাবে ঘোষণা করলাম। এছাড়াও পোস্টকার্ডের মাধ্যমে আমরা জেলাশাসক ও পুরসভার প্রশাসককে লিখিত অনুরোধ করেছি, তাঁরাও যেন সরকারিভাবে পুরসভাকে অনাথ আশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেন।
এবিষয়ে মহকুমা শাসক তথা পুরসভার প্রশাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের কাছে বিজেপি নেতৃত্ব আগে থেকে মিছিল অথবা কোনও কর্মসূচি করার অনুমতি নেয়নি। পুরভোট কবে হবে সেটা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। পুরসভার সামনে যদি কেউ কোনও বেআইনি ফেস্টুন লাগিয়ে থাকে তাহলে আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ করব।
তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস মজুমদার বলেন, বালুরঘাট পুরসভায় প্রশাসক রয়েছেন। নাগরিক পরিষেবা ঠিকঠাকই রয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনই পুরভোটের দিনক্ষণ ঠিক করবে। এধরনের বুদ্ধিহীনের মতো কাজ বিজেপিই করতে পারে। এগুলি বিজেপির সস্তার রাজনীতি। এতে মানুষ সাড়া দেবে না।
এবিষয়ে আরএসপি নেতা বিমল সরকার বলেন, বিজেপি পুরসভাকে কী আখ্যা দিল সেবিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করব না। তবে সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী ছ’মাস পুরসভা প্রশাসকের অধীনে থাকতে পারে। কিন্তু এখানে প্রায় দেড় বছর হতে চলল নির্বাচন হচ্ছে না। তৃণমূলের নেতারাই কমিটিতে বসে রয়েছেন। নাগরিক পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন হোক।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ডের মেয়াদ প্রায় দেড় বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপর মহকুমা শাসকের তত্ত্বাবধানেই চলছে পুরসভার সমস্ত কাজকর্ম। সামনেই ভোট বলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তার আগেই বিজেপি আন্দোলনে নেমে পড়েছে। রবিবার সকালে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা একটি মিছিল করে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বালুরঘাট পুরসভার সামনে এসে জড়ো হয়। পুরসভার গেটে অনাথ আশ্রম লেখা একটি ফেস্টুন টাঙিয়ে দেয় বিজেপি।