বিএনএ, রায়গঞ্জ: সরকারি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠায় রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি মানস ঘোষকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করার দাবিতে রবিবার উত্তর দিনাজপুর জেলার একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ অবরোধ করল বিজেপি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি একই দাবিতে রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির। আক্রান্ত কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সুবিচারের আসায় প্রয়োজনে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন। পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি তথা রায়গঞ্জ-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহকারী সভাপতি মানস ঘোষের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠায় শাসকদলের জেলা নেতাদের একাংশ অস্বস্তিতে। কর্মরত অবস্থায় এক সরকারি কর্মীকে মারধর ইস্যুতে বিরোধীদের আন্দোলনের পাশাপাশি নানা মহলেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এব্যাপারে জেলাশাসকের কাছে চিঠি লিখে ওই নেতাকে গ্রেপ্তারির দাবি জানাবেন বলে জানিয়েছেন বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তও।
গত ১৫ জানুয়ারি রায়গঞ্জের উদয়পুরে কিষাণমাণ্ডিতে এক চাষি তার সঠিক নথিপত্র না আনায় কৃষিদপ্তর নিযুক্ত আতমা প্রকল্পের কর্মী সন্দীপন সেনগুপ্ত চেক বিলিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এর জেরেই সরকারি কাজে যুক্ত ওই কর্মীকে সকলের সামনেই চড়, কিল, ঘুসি মারতে মারতে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতির বিরুদ্ধে। সরকারি কাজে বাধাদান ও সরকারি কর্মীকে মারধরের ঘটনার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে বলে অভিযোগ। পরে হামলার ওই ঘটনায় মারধরের একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরকারি কর্মীমহলে শোরগোল পড়ে যায়। এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ মণ্ডল বলেন, সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করতে গিয়ে একজন ফিল্ডস্তরের সরকারি কর্মীকে যদি জনপ্রতিনিধির কাছে বেধড়ক মার খেতে হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা আজ কোথায়? সন্দীপন সেনগুপ্তকে সেখানকার একজন পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি যেভাবে মারধর করেছেন, সেই ভিডিও ফুটেজ আমরা কৃষিমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। আমাদের কর্মী কোনও অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন ওই জনপ্রতিনিধি। কিন্তু সেপথে না হেঁটে গুন্ডাগিরি করেছেন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা আমাদের সংগঠনকে আশ্বস্ত করেছেন। ঘটনার চারদিন পরেও কেন পুলিসে অভিযোগ করা হল না, সেদিকেও আমরা নজর রাখছি। বিচার পেতে প্রয়োজনে আমরা মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হব।
এদিকে রায়গঞ্জে কর্তব্যরত সরকারি কর্মীর উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বিজেপি রায়গঞ্জ শহরের বিধাননগর মোড়ে বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ আন্দোলনে সামিল হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ওই আন্দোলনের জেরে রায়গঞ্জ শহরে যানজট তৈরি হয়। র্যা ফ সহ বিশাল পুলিস বাহিনী ঘটনাস্থলে এলে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ তুলে নেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। পাশাপাশি এদিন ইসলামপুরের শিবডাঙি পাড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে মানস ঘোষের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন সামিল হন গেরুয়া শিবিরের নেতাকর্মীরা।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ি বলেন, একজন গুন্ডাকে শাসকদল জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসিয়েছে। ওই চেয়ার থেকে তাকে এখনই অপসারণ করা উচিত। এছাড়াও কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে মারধরের ঘটনায় কেন এফআইআর হবে না? আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী সভাপতির অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির অফিস ঘেরাও করা হবে।
সিপিএমের রায়গঞ্জ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক তীর্থ দাস বলেন, পুলিস সরকারি কর্মচারিদের মারধর করাটাই তো তৃণমূল কংগ্রেসের কালচার। রাজ্যের অন্যন্য জায়গার মতো রায়গঞ্জের পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি সেই কাজটাই করেছেন।
এব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, সামান্য একটি বিষয়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করছে বিজেপি।