সংবাদদাতা, মালদহ: সংরক্ষণের গেরোয় নিজেদের ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হতে না পারা ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সহ বেশ কয়েকজন পরিচিত তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলারের ভোট ভাগ্য নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। ওই কাউন্সিলারদের প্রায় সবাই এনিয়ে দলের ওপরে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ইংলিশবাজার পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবার সংরক্ষণ বিধি অনুযায়ী মহিলা কাউন্সিলার পেতে চলেছে। শুক্রবার খসড়া তালিকা প্রকাশিত হলে দেখা যায়, অনেকেই সংরক্ষণের গেরোয় আটকে গিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নীহার ঘোষ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি, কাউন্সিলার আশিস কুণ্ডু সহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা শেষ পর্যন্ত সরেই দাঁড়ান, নাকি অন্য কোনও ওয়ার্ড থেকে দল তাঁদের প্রার্থী করে তা নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জোর আলোচনা চলছে জেলা তৃণমূলের অভ্যন্তরে।
এপ্রসঙ্গে ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নীহারবাবু বলেন, আমরা সকলেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক। প্রার্থী হওয়া বা না হওয়া দলের ওপরেই নির্ভর করছে। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তা মাথা পেতে নিতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসাবে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছিলেন নীহারবাবু। পাশের ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন তাঁর সহধর্মিনী গায়েত্রী ঘোষ। এখন অবশ্য দু’জনই তৃণমূল কংগ্রেসে রয়েছেন। নীহারবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে নিজেদের মধ্যে ওয়ার্ড বিনিময়ের অনুমতি তৃণমূল দেয় কি না তার দিকেও লক্ষ্য রাখছে রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, নীহারবাবু ইংলিশবাজার পুরসভার তিনবারের কাউন্সিলার। এরমধ্যে দু’দফায় তিনি পুরসভার চেয়ারম্যানও থেকেছেন।
একই কারণে এবার নিজের ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াতে পারছেন না ইংলিশবাজার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। তিনি বর্তমানে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। তাঁর স্ত্রী অঞ্জু তিওয়ারি ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। কংগ্রেসের টিকিটে তাঁরা দু’জনেই জিতেছিলেন ২০১৫ সালে। পরে দু’জনেই তৃণমূলে যোগ দেন। প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নরেন্দ্রনাথবাবু রাজনৈতিক মহলে নন্দু তিওয়ারি নামেই পরিচিত। রেল শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
এদিন তিনি টেলিফোনে বলেন, দু’দিন ধরে মালদহের বাইরে রয়েছি। মালদহে ফিরে সিদ্ধান্ত নেব। তবে ভেবেছি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলাটা প্রাথমিকভাবে জরুরি। কারণ তাঁরাই আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাঁদের মতামত দলকে জানাব। এরপরে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা নির্দ্বিধায় মেনে নেব।
প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন ইংলিশবাজার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আশিস কুণ্ডুও। তাঁর ওয়ার্ডও এবার সংরক্ষণের আওতায় এসেছে। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা বেশ কিছুদিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন। তিনবারের কাউন্সিলার আশিসবাবু বর্তমানে পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য। তিনি বলেন, সংরক্ষণ হয়েছে নির্দিষ্ট আইন মোতাবেক। সুতরাং কারও কিছু বলার নেই। প্রার্থী করা না করা দলের বিষয়। ব্যক্তি রাজনীতির চেয়েও জরুরি হল পুরসভায় দলের ক্ষমতা বজায় রাখা। বাকি সিদ্ধান্ত দল নেবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৌসম নুর বলেন, সকলেই প্রবীণ ও অভিজ্ঞ কাউন্সিলার। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।