পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এব্যাপারে মালদহের পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছি। পুলিসি অভিযানের চাপে বর্তমানে মালদহের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যে মায়ানমার থেকে জেলায় আনা ৬০ লক্ষ টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট আমরা বাজেয়াপ্ত করি। সেইসঙ্গে পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক বাংলাদেশী নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়। একইরকমভাবে আমরা জালনোটের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছি। পুলিসি সক্রিয়তার জেরে সম্প্রতি একাধিক জায়গা থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। জাল নোটের কারবারিদের জেরা করে আমরা বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে ওই নোট নিয়ে আসা হচ্ছে বলে ধৃতরা জানিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পাচারের বিষয়টি উঠেছিল। তা আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মালদহ জেলা কালেক্টরেটের কনফারেন্স হলে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির আধিকারিক এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মালদহ ছাড়াও এরাজ্যের কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা যোগ দেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নোয়াগাঁও, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারি, লালমণির হাট এবং কুড়িগ্রাম জেলার প্রশাসন ও পুলিসের আধিকারিকরা বৈঠকে অংশ নেন। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) আধিকারিকরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তা বিশ্বের দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমানাগুলির অন্যতম। ওই সীমান্তের একটা বড় অংশ এরাজ্যের সঙ্গে রয়েছে। স্থল সীমান্তের পাশাপাশি দীর্ঘ জল সীমান্তও রয়েছে। ওই সীমান্ত দিয়ে মাদক, জালনোট, গোরু, সোনা, নেশার ট্যাবলেট, কাশির সিরাপ সহ অন্যান্য সামগ্রী পাচার করা হয়। অভিযোগ, দুই দেশের সীমানায় প্রহরার দায়িত্বে থাকা জওয়ানদের একাংশের মদতে পাচারকারীদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী থানার পুলিসের একাংশও পাচারকারীদের সঙ্গে দহরম মহরম রেখে চলে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফলে পাচারে লাগাম টানা যাচ্ছে না। সম্প্রতি মালদহ সহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচার করার সময় প্রচুর মাদক ও গোরু উদ্ধার করা হয়েছে। স্থলপথে গোরু পাচারের সময় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পুলিসের নজরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে পাচারকারীরা অন্য কৌশল রপ্ত করেছে। তারা স্থলপথের বদলে নদীর স্রোতের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে গোরু পাচার করছে। সীমান্তের এপারে নদীতে গোরু নামিয়ে দেওয়া হয়। ওপারে পাচারকারীরা নদীর বিভিন্ন ঘাটে অপেক্ষা করে। গোরুর পাল নদীর জলে ভাসমান অবস্থায় সীমানা পার হয়ে যায়। বাংলাদেশী পাচারকারীরা ওই গোরু তুলে নেয়। যাতে গোরুগুলি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য একটা সঙ্গে আরেকটার গলায় কলার ভেলা বা মোটা বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়।
এদিক থেকে মাদকও পাচার করা হয়। তবে মাদক পাচারের কৌশল ভিন্ন। পাচারকারীরা বিভিন্ন পশু পাখির ডাক নকল করে মাদক সরবারাহ করে। তারা আগে থেকেই মাদকসমেত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে ঘাঁটি গাড়ে। মাদক নিতে আসা ওপারের পাচারকারীরা কাঁটাতার লাগোয়া গ্রামে বসে থাকে। রাতের অন্ধকারে বা ভরদুপুরে এপার থেকে পশু পাখির ডাক নকল করা হয়। ওই গলার স্বর ওপারের পাচারকারীদের কাছে পরিচিত। তারা ডাক শুনে বন-বাদার হয়ে কাঁটাতারের পাশে হাজির হয়। এপার থেকে মাদক ভর্তি ব্যাগ ওপারে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। বদলে ওপার থেকে জাল নোটের প্যাকেট এপারে উড়ে আসে। এভাবেই বিনিময় প্রথার মতো মাদক ও জাল নোটের আদানপ্রদান বছরভর চলতে থাকে।