সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: অন্য কোথাও শ্বাসরোধ করে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য কোতোয়ালির নির্জন আমবাগানেই পোড়ানো হয়েছিল ওই মহিলাকে। প্রাথমিক তদন্তের পর এই তথ্য জানিয়েছেন জেলার পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া। ইংলিশবাজার ব্লকের কোতোয়ালির ধানতলা আমবাগানের ভৌগোলিক পরিবেশকে কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা। নির্জনতার সুযোগে তারা যুবতীকে বাগানের মধ্যেই গায়ে আগুন দিয়ে দিয়েছে। যে জায়গায় ওই যুবতীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখান থেকে নিকটবর্তী গ্রামের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। রাত তো দূর অস্ত, দিনের বেলাতেই সেখানে যদি কোনও অসামাজিক কার্যকলাপ চলে, তাহলেও বোঝার জো নেই। উঁচু নিচু আমবাগানের আড়ালে এমনই গা ছমছমে পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতীরা ওই যুবতীকে পুড়িয়ে খুব সহজে গা ঢাকা দেয় বলে অনুমান করা হচ্ছে। এদিকে ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মৃতের পরিচয় মেলেনি। দুষ্কৃতীরা পুলিসের নাগালের বাইরেই রয়ে গিয়েছে। মালদহ জেলা পুলিস জানিয়েছে, মৃতদেহ সনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার কিনারা করতে ইংলিশবাজার থানার আইসির নেতৃত্বে সাতজনের টিম গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, ওই যুবতীকে সম্ভবত ধর্ষণ করে ওখানেই পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
তদন্তকারী দলে আইসি ছাড়াও দু’জন সাব ইন্সপেক্টর এবং চারজন কনস্টেবল রয়েছেন। এদিকে এদিন ঘটনার কিনারা করতে পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া সহ পদস্থ পুলিস কর্তারা ঘটনাস্থলে এসে আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন। যেখানে দগ্ধ দেহটি মিলেছে সেখান থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের জন্য এলাকার মাটিও কেটে নিয়ে যান পুলিস আধিকারিকরা।
এ বিষয়ে জেলা পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, থানার আইসিকে ঘটনার তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমরা এলাকার কয়েকটি সিসিটিভি চিহ্নিত করেছি। সেগুলির ফুটেজ দেখে ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা করছি। এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা হচ্ছে। পুরো ঘটনার তদন্তের জন্য আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এটা স্পষ্ট অন্য কোথাও শ্বাসরোধ করে খুন করে ওই আমবাগানে মহিলার গায়ে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইংলিশবাজার থানার আইসি অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, এখনও মৃতের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি। এদিন ঘটনাস্থল থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি আমরা ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠাব।
মালদহ সিডব্লিউসির চেয়ারপার্সন চৈতালি ঘোষ সরকার বলেন, যেখানে ওই যুবতীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল এদিন সেই এলাকা পরিদর্শন করেছি। ঘটনায় জড়িতদের যাতে চরম শাস্তি হয় সে বিষয়টি নিয়ে পুলিস সুপারের সঙ্গে কথা বলব।
কোতোয়ালির টিপাজানির রাজ্য সড়ক থেকে দক্ষিণের গ্রামের দিকে যেতে একটি বড় আম বাগান রয়েছে। জনবসতি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভিতরে আম বাগানের মাঝখানে ওই যুবতীর দেহ উদ্ধার করা হয়। এদিন ফরেন্সিক টেস্টের জন্য ঘটনাস্থল থেকে একাধিক নমুনা সংগ্রহ করে পুলিস। ওই এলাকা থেকে তদন্তকারী অফিসারেরা সোয়েটার এবং জিন্সের পোশাক জাতীয় কিছুর নমুনা সংগ্রহ করেছে বলে জানা গিয়েছে।