মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
উত্তরবঙ্গের অঘোষিত রাজধানী শহর শিলিগুড়ির মাটিতে কংগ্রেস ও সিপিএমের দোস্তি দীর্ঘদিনের। গত বিধানসভা নির্বাচনে এবং পুরভোটেও তাঁরা জোট করেই লড়াই করে। রাজনীতির ময়দানে যা ‘শিলিগুড়ি মডেল’ নামে পরিচিত। একদা এই মডেল নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা হয়। আসন্ন শিলিগুড়ি পুরসভার নির্বাচনেও কংগ্রেস ও সিপিএম গাঁটছড়া বেঁধে লড়াই করার ছক কষেছে। এজন্য দুই দলের শীর্ষ নেতারা একজোট হয়ে নাগরিক কনভেনশন করেছেন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জোট ‘ফ্লপ’ হওয়ায় কংগ্রেসের একাংশই লালপার্টির সঙ্গে দোস্তি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা দল ছাড়তে শুরু করেছেন।
গত বুধবার দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সেবা দলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিবেক সিং ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিমলেশ মৌলিক দলত্যাগ করেন। ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা একঝাঁক কর্মী নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের হাতে দলের ঝাণ্ডা তুলে দেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের দেশবন্ধুপাড়ায় বিমলেশবাবুর বাড়ি। একদা তিনি যুব কংগ্রেসের এবং কংগ্রেসের শিলিগুড়ি টাউন সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। বিমলেশবাবু বলেন, এই রাজ্যের মাটিতে আমাদের প্রধান শত্রু সিপিএম। প্রতিটি পদে পদে ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। এখন নীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার উদ্দেশে কিছু নেতা সিপিএমের হাত ধরেছেন। হাত এবং কাস্তে-হাতুড়ি-তারা এই জোটকে মানুষ মেনে নিচ্ছেন না। প্রতিটি নির্বাচনে এই জোট ফ্লপ হচ্ছে। তাতেও কংগ্রেস নেতাদের হুঁশ না ফেরায় দলত্যাগ করেছি।
কংগ্রেস ছুট বিবেকবাবুর বাড়ি শহরের ঝঙ্কারমোড় এলাকায়। তিনি বলেন, বিগত বামফ্রন্ট জমানায় বহু কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর হাতে। অনেক মা’র কোল খালি হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই সব কংগ্রেস নেতা কর্মীদের ভুলে গিয়ে লোকসভা ভোটে সিপিএমের হাত ধরেন কংগ্রেস নেতারা। তাই লোকসভা ভোটের পরই সেবাদলের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিই। কংগ্রেস ছুট দুই নেতাই বলেন, বর্তমানে রাজ্যের মাটিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলই হল মূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী একাই কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভেদকামী শক্তি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে রাজ্যের মাটিতে উন্নয়নমূলক কাজের গতি এসেছে। রাস্তা, নিকাশি, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সমব্যথী প্রভৃতির মতো একগুচ্ছ সামাজিক প্রকল্প চালু করেছেন। তাঁর এই উন্নয়নমূলক কাজের শরিক হতেই তৃণমূলে শামিল হয়েছি।
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি বলেন, বিবেকবাবু ও বিমলেশবাবু সঙ্গে প্রায় ২০০ জন কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
ওই নেতাদের দলবদলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কংগ্রেস। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে বিবেকবাবুর সম্পর্ক ছিল না। আর বিমলেশবাবু আগেও বহুবার দলবদল করেছেন। এবার তিনি কাউন্সিলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তৃণমূলে গিয়েছেন। তাঁর স্বপ্নপূরণ হবে না। ওঁরা দলত্যাগ করায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না। ওঁদের সঙ্গে দলের কোনও কর্মী, সমর্থক যাননি। আর সিপিএমের সঙ্গে জোট করেই পুরসভা নির্বাচনে লড়াই করা হবে। বিগত বামফ্রন্ট জমানার চাইতে বেশি সন্ত্রাস তৃণমূলের জমানায় হচ্ছে। গণতন্ত্রহত্যাকারী তৃণমূলকে রুখতেই এই জোট করা হচ্ছে।
অন্যদিকে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সাফল্য মেলার পর তৃণমূল শিবির আরও চনমনে হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি বলেন, কংগ্রেস নেতারা বড়বড় কথা বললেও তাঁরা দল টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। শীঘ্রই কংগ্রেসের আরও অনেকে তৃণমূলে যোগাযোগ দান করবেন।