বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
গত লোকসভা ভোটের পর উত্তরবঙ্গের অঘোষিত রাজধানী শিলিগুড়িতে কিছুটা নুইয়ে পড়েছিলেন পর্যটনমন্ত্রী। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে তিনি ফের ওয়ার্মআপ শুরু করেন। এরই মাঝে দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করা হলেও দমে যাননি। পুরসভার নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, শহরের রাজনীতিতে তিনি নিজেকে ততটাই প্রাসঙ্গিক করে রাখছেন। ইতিমধ্যে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে শহরের ১৫, ২৩, ২৯ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তুলছেন। বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে অভাব অভিযোগ শোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয়স্থানে যাচ্ছেন। এলাকায় এলাকায় গিয়ে প্রাতঃভ্রমণও করছেন।
শুধু তাই নয়, দলীয় নেতাদের নিয়ে এনআরসি ইস্যু নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা, মিছিল করছেন। রাস্তায় নেমে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান করছেন। এমনকী শহরের যানজট ও ট্রাফিক সমস্যা, পানীয় জলের সমস্যা, টোটো ও সিটিঅটোর দাপট নিয়েও পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এসজেডিএ’র মাধ্যমে শহরে রাস্তা ও নিকাশি নালা চাঙ্গা করা, পার্ক সংস্কার করার কাজের শিলান্যাস করছেন। বামফ্রন্ট শাসিত পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে মাঝেমধ্যেই তোপ দাগছেন। তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সাফল্য মেলার পর তাঁর তৎপরতা আরও বেড়েছে। কয়েকদিন আগে বাড়িতে গিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভার পরিবেশ বিভাগের অসুস্থ মেয়র পরিষদ সদস্য মুকুল সেনগুপ্তের সঙ্গে দেখা করেন। পুরভোটের আগে তাঁর এমন তৎপরতা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। জোড়াফুল শিবিরের অন্দরেই এনিয়ে জোর গুঞ্জন উঠেছে। এনিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, সিপিএম নিয়ন্ত্রিত বামফ্রন্ট এই শহরের শাসক দল। এখানে তাঁদের মুখ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। এবার পুরভোটের ময়দানে অশোকবাবুদের বধ করতে গৌতমবাবুকে মেয়র প্রজেক্ট করেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে তৃণমূল। এখন সেই মহড়াই চলছে।
রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে গৌতম অন্যতম। শিলিগুড়ি শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাড়ি। দীর্ঘদিন তিনি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে পুরসভার কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন। গত পুরভোটে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী শুক্লা দেব। বর্তমানে পর্যটন দপ্তরের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ, টি বোর্ড সহ সরকারি বিভিন্ন কমিটির পদেও রয়েছেন। তাছাড়া তিনি দলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান। বামফ্রন্ট শাসিত শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র একাধিকবার পুরসভাকে এড়িয়ে এসজেডিএ’র মাধ্যমে শহরে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ তুললেও পর্যটনমন্ত্রী তাতে কর্ণপাত করছেন না। পর্যটন দপ্তর ছাড়াও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কাজকর্ম তদারকি বাড়িয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার জল্পনা ঘিরে প্রশ্ন করা হলে পর্যটনমন্ত্রী অবশ্য কিছু বলতে চাননি। তাঁর সাফ জবাব, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।
অন্যদিকে, পর্যটনমন্ত্রীকে দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে মান্যতা দিলেও পুরভোটে মুখ কে সেই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ খোলাখুলি কিছু বলতে চাননি। তৃণমূল কংগ্রেসের শিলিগুড়ি-২ নম্বর টাউন কমিটির সভাপতি বেদব্রত দত্ত বলেন, দার্জিলিং জেলায় গৌতমদা দলের অভিভাবক। অগ্রজ ও শীর্ষ নেতা। তবে পুরভোটে দলের মুখ কে হবেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ভোটযুদ্ধ নিয়ে দলের রাজ্য কমিটি আমাদের যেভাবে চালাবে, আমরা সেইভাবে চলব।
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার বলেন, শিলিগুড়ি শহরকে পাপমুক্ত করতে অর্থাৎ সিপিএমকে হটাতে প্রস্তুতি শুরু করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের মুখ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ব্যাপারে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।