রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার, সংবাদদাতা: রাজ্যের সদ্য সমাপ্ত তিনটি বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ের হ্যাট্রিক করে তৃণমূল কংগ্রেস এবার ফালাকাটা বিধানসভার উপনির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে ঝাঁপাচ্ছে। কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে লোকসভা ভোটে বিজেপির লিডকে ছাপিয়েও দলের জয়ের বিষয়ে উজ্জীবিত জোড়াফুল শিবির। সেই জন্য জানুয়ারি মাসের শেষে ফালাকাটা বিধানসভার উপনির্বাচন হবে ধরে নিয়েই শাসক দল এখন থেকেই বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে, এনআরসির নেতিবাচক প্রচার ও রাজ্যের তিনটি বিধানসভার উপনির্বাচনে জোড়াফুলের সাফল্যে ম্রিয়মান দেখাচ্ছে পদ্মফুল শিবিরকে।
তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারীর মৃত্যুতে ফালাকাটা বিধানসভা আসনটিতে উপনির্বাচন হচ্ছে। অনিলবাবু টানা দু’বার ফালাকাটা থেকে জয়ী হয়েছিলেন। প্রয়াত বিধায়ক অনিলবাবু ছিলেন ফালাকাটার উন্নয়নের রূপকার। বিরোধীরাও সেটা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, জানুয়ারির শেষের দিকে ফালাকাটা বিধানসভার উপনির্বাচন হতে পারে ধরে নিয়েই এখানে জোড়া ফুল শিবির এখন থেকেই বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। প্রচারে এলাকার উন্নয়ন ও এনআরসি ইস্যুকে তুলে ধরা হচ্ছে। কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই জোড়া ফুল শিবিরের।
তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, প্রার্থী নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। প্রার্থী ঠিক করবে রাজ্য নেতৃত্ব। আমাদের লক্ষ্য শুধু সদ্য সমাপ্ত তিনটি বিধানসভার উপনির্বাচনের মতো ফালাকাটাতেও দলের জয়ের হ্যাট্রিক বাজিমাত করা। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগচ্ছি।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফালাকাটায় তৃণমূলের জয়ে লিড ছিল ১৬ হাজার। এরপর ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচনে বিধানসভার ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১১টি পঞ্চায়েত। বাকি দু’টি পঞ্চায়েত পায় বিজেপি। ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতিরও দখল নেয় তৃণমূল। ফালাকাটা বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়া জেলা পরিষদের তিনটি আসনের তিনটিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা ভোটে ফালাকাটায় ২৭ হাজার ভোটের লিড পেয়ে এগিয়ে যায় বিজেপি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আসলে কেন্দ্রে স্থায়ী সরকারের স্বার্থেই ফালাকাটাতেও লিড পায় বিজেপি। তাই লোকসভা ভোটে ফালাকাটায় অনিল অধিকারীর মিথ কাজ করেনি।
কিন্তু তারপর মুজনাই নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এনআরসির ধাক্কায় গেরুয়া শিবিরের সেই উন্মাদনা এখন উধাও। পদ্মফুল শিবিরকে আরও ম্রিয়মান দেখাচ্ছে রাজ্যের তিনটি বিধানসভার উপনির্বাচনে দলের গো হারার কারণে। অন্যদিকে, জোড়াফুল শিবির আরও উজ্জ্বীবিত কালিয়াগঞ্জের উপনির্বাচনের ফলাফলে। কালিয়াগঞ্জে লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী ৫৭ হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিজেপির সেই ভোটের লিডকেও ছাপিয়ে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বাজিমাত করেছে ঘাসফুল শিবির।
তাই সঙ্গত কারণেই তৃণমূলের ফালাকাটা ব্লক কার্যকরী সভাপতি সন্তোষ বর্মন বলেন, কালিয়াগঞ্জের মতো ফালাকাটা বিধানসভার উপনির্বাচনেও আমরা জিতব। ফালাকাটা উপনির্বাচনে জয়ের হ্যাট্রিক করে দলের এই জয়কে আমরা প্রয়াত বিধায়ক অনিলবাবুকে উৎসর্গ করব।
পিছিয়ে নেই অবশ্য পদ্মফুল শিবিরও। পদ্মফুল শিবিরও ফালাকাটা বিধানসভার উপনির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজও শুরু করে দিয়েছে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ মণ্ডল বলেন, কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল দেখে তৃণমূল ফালাকাটাতেও জয়ের খোয়াব দেখছে। লোকসভা ভোটে ফালাকাটায় আমরা যে লিড পেয়েছি তাতে বিধানসভা উপনির্বাচনে আমাদেরই জয় হবে।
তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মানুষের মধ্যে এখনও এনআরসি আতঙ্ক জাঁকিয়ে রয়েছে। মানুষ এখনও ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে। তাই বিজেপিকে ফালাকাটায় উপনির্বাচনে জিততে হলে মানুষের এনআরসি আতঙ্ক দূর করতে হবে।